২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের আফগানিস্তানে অভিযান নিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়েছে। যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানি সত্ত্বেও সেখানে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলা ও তালেবানকে পরাজিত করা সম্ভব হয়নি। এই কুড়ি বছরের যুদ্ধে আমেরিকার চার প্রেসিডেন্টের কার কী দায় আছে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে-
জর্জ ডব্লিউ বুশ
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার পর জর্জ ডব্লিউ বুশ সন্ত্রাসবাদকে উপড়ে ফেলার ঘোষণা দেন। তিনি সেই সময় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রক তালেবানকে সেখানে থাকা আল কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনসহ অন্য নেতাদের হস্তান্তরের আহ্বান জানান। কিন্তু তালেবান তা প্রত্যাখ্যান করলে বুশ যুদ্ধের পথ বেছে নেন। কংগ্রেস সদস্যরা আফগানিস্তানে অপরাধীদের ধরতে সেনা পাঠানোর অনুমোদন দিলেও তারা স্পষ্টত কখনই যুদ্ধ ঘোষণার পক্ষে ভোট দেননি বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন মতে, এর পর বুশ বলেছিলেন- ‘আসন্ন সংঘাত আগের যে কোনো ঘটনার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হবে।’ তবে তিনি ধারণাও করতে পারেনি যে তা কত দীর্ঘ হতে পারে। এর পর বুশ আফগানিস্তানে হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছেন। ২০০৩ সালের মে মাসে পেন্টাগন বলেছিল- আফগানিস্তানে বড় অভিযান শেষ হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সব সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। কিন্তু তালেবান ক্রমশই শক্তিশালী হয়ে ওঠায় তার সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষার কাজ জটিল হয়ে পড়ে। ২০১৭ সালের আগস্টে ট্রাম্প স্বীকার করেন, তার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতির কারণে সেনা প্রত্যাহার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি তখন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা বেঁধে দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এর এক বছর পর ট্রাম্প আফগান-আমেরিকান কূটনীতিক জালমে খলিলজাদকে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেন। সেই আলোচনায় আফগান সরকারকে তেমনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আলোচনার মধ্যেই তালেবান দেশটির রাজধানী কাবুলসহ নানা স্থানে হামলা চালাতে থাকে। এতে অনেক বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারান।
বারাক ওবামা
২০০৯ সালে হোয়াইট হাউসে আসার পর জর্জ বুশের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আফগান যুদ্ধ নিয়ে বিপাকে পড়েন বারাক ওবামা। তার শীর্ষ জেনারেলরা তালেবানকে দুর্বল করতে সেখানে সেনা সংখ্যা ‘বাড়ানো’র পরামর্শ দেন। কিন্তু তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর বিরোধিতা করেন। তার পরও ওবামা প্রশাসন আফগানিস্তানে সেনা সংখ্যা বাড়াতে থাকে। সেই সময় আফগান যুদ্ধ আবার তীব্র হয়ে ওঠে। একই সময় ওবামা ঘোষণা দেন- ২০১১ সালে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেছিলেন- অতিরিক্ত সৈন্য ‘আফগানদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করবে।’ পরবর্তী সময় ওবামার সহযোগীরা বলেছিলেন, সেনা কমান্ডাররা তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কৌশল গ্রহণের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
জো বাইডেন
জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়ার আগে থেকেই জো বাইডেনকে আফগানিস্তান নিয়ে কথা বলতে হয়। তিনি আফগান যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তিনি যখন সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তখন তা ওবামা প্রশাসন প্রত্যাখ্যান করেছিল। বাইডেন মনে করতেন, যে যুদ্ধের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই তা শেষ হওয়া উচিত।
ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি জানতে পারেন, আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরিয়ে নিলে সেখানকার সরকারের পতনের পাশাপাশি তালেবানরা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে যে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন তিনি, এ কারণে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। জরিপ ও গবেষণা সংস্থা গ্যালাপের পরিসংখ্যান বলছে, তালেবান কাবুলসহ আফগানিস্তান কব্জা করার পর নিজ দেশে বাইডেনের জনসমর্থন নেমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
Leave a Reply