শিক্ষা প্রশাসনের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী এ বছরে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় আবশ্যিক এবং চতুর্থ বিষয়ের কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। গ্রুপভিত্তিক তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এমন ঘোষণার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবশ্যিক এবং চতুর্থ বিষয় পরিবর্তনের আবেদন নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা বোর্ডে ভিড় করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। আবার অনেকে রেজিস্ট্রেশনের সময় যে ‘বিষয়’ পছন্দ দিয়েছেন, তার উল্টো হয়েছে চূড়ান্ত ফরম ফিলাপে। আবশ্যিক আর চতুর্থ বিষয় নিয়ে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষা বোর্ডগুলোয় দৌড়ঝাঁপ করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে ফরমপূরণ শেষ হওয়ায় এখন আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বেইলী রোডে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী, যারা তাদের পছন্দের চতুর্থ বিষয় নির্ধারণ করে তা এখন পরিবর্তন হয়েছে আবশ্যিক বিষয়ে। আবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গতকাল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আসছেন তাদের চতুর্থ বিষয় পরিবর্তনের জন্য। কলেজে ভর্তির সময় চতুর্থ বিষয় পছন্দ করলেও কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে তা পরিবর্তন হয়ে যায়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এটি সংশোধনের সুযোগ চান।
গতকাল দুপুরে বকশী বাজার ঢাকা বোর্ডের প্রবেশদ্বারে কথা হয়, ধামরাই কলেজের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি জানান, এইচএসসিতে তার চতুর্থ বিষয় হিসেবে ‘জীববিজ্ঞান’ দিয়েছিলেন। এখন এই বিষয় পরিবর্তন করে ‘উচ্চতর গণিত’ তিনি চতুর্থ বিষয় হিসেবে দিতে চান। ‘জীববিজ্ঞান’ সে আবশ্যক বিষয় হিসেবে নিতে চান। আরও দুই শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, তারা এসেছেন সিদ্ধেশরী মহিলা কলেজ থেকে; তাদের অভিযোগ আবশ্যিক বিষয় হিসেবে নির্বাচিত করা চতুর্থ বিষয় হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কলেজ থেকে। এখন কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে কোনো পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তারা বোর্ডে এসেছেন। বোর্ডে এসেছেন ঢাকার দক্ষিণ খানের এমারত হোসেন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীর দুই অভিভাবক। তারা জানান, আগে তো জানানো হয়নি চতুর্থ বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এখন চতুর্থ বিষয় পরিবর্তনের জন্য স্কুলে গেলে তাদের বোর্ডে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে বোর্ডও তাদের কোনো আবেদন রাখেনি বলে অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ করেন বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, শিক্ষার্থীরা ফরমপূরণের সময় যে বিষয় ‘চতুর্থ বিষয়’ হিসেবে নির্বাচন করে দিয়েছে, সেটিই বহাল থাকবে। চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া না হলেও মার্কশিটে নম্বর থাকবে। ওই শিক্ষার্থীর জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় ওই বিষয়ের নম্বরের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে নম্বর যোগ করা হবে। আমরা এখন পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি, এখন আর বিষয় পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলেও জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ছোট পরিসরে আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে শিক্ষা বোর্ডগুলো সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত পরিসরের এই পরীক্ষা নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ ও নানা শঙ্কা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আমরা যেভাবেই হোক পরীক্ষা নিতে চাই, যাতে এ বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কেউ অটোপাসের অপবাদ না দিতে পারে। এরই মধ্যে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
শিক্ষা প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরিস্থিতি অনুকূলে এলে এবার এসএসসি ও এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রেই গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে। অর্থাৎ এইচএসসিতে যদি কোনো শিক্ষার্থীর নৈর্বাচনিক বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত থাকে, তা হলে তাকে এই তিন বিষয়ের ছয়টি পত্রে পরীক্ষা দিতে হবে। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়। রচনামূলক অংশে নম্বর থাকবে ৩৫ ও এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন) থাকবে ১৫ নম্বরের। তবে প্রশ্নপত্র এখন যেভাবে হয়, সেভাবেই হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ থাকবে। যেমন আগে যেখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে আটটির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এখন সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে এর মধ্যে চারটির উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে। আর প্রতি বিষয়ে মোট নম্বর ১০০ নম্বরের বদলে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। তবে ৫০ নম্বরকে ১০০-তে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল দেওয়া হবে।
সিদ্ধেশরী গার্লস কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তার মেয়েকে মেডিক্যালে পড়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু এখন উচ্চ মাধ্যমিকের সব বিষয়ে পরীক্ষা হবে না, এমনকি এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে পরীক্ষা হবে কিনা, এ নিয়ে তিনি চিন্তিত। এর মধ্যে মেয়ের ‘চতুর্থ বিষয়’ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তার মেডিক্যলে ভর্তি প্রতিযোগিতা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
তিনি বলেন, এইচএসসির বিজ্ঞান বিভাগে মেডিক্যালে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা সাধারণত বায়োলজিকে মূল বিষয় হিসেবে রাখে। এখন যদি বায়োলজিতে পরীক্ষা দিতে না পারে তা হলে তারা কি মেডিক্যালে পরীক্ষা দিতে পারবে, এমন বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষার্থীদের মনে।
উল্লেখ্য, এবার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি ও ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেওয়া হবে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির ফল মূল্যায়ন করা হবে। এসএসসিতে (ভোকেশনাল) জেএসসি ও নবম শ্রেণি এবং এইচএসসিতে (ভোকেশনাল) এসএসসি ও একাদশের ফল মূল্যায়ন করা হবে।
Leave a Reply