‘সেদিন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। মরে গেছি ভেবে লাশের ট্রাকে তুলেছিল, ঢাকা মেডিক্যালের করিডোরেও রেখেছিল, কিন্তু জ্ঞান ফিরে আসায় লাশের মধ্য থেকে চিৎকার করে উঠি, তখন সবাই বুঝতে পারে আমি মরিনি, বেঁচে আছি। আর কিছুক্ষণ পর যদি জ্ঞান ফিরত তাহলে হয়তো মর্গেই চলে যেতাম।’ কথাগুলো বলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের একজন নাসিমা ফেরদৌস। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা এই নারী এখনো শরীরে বয়ে চলেছেন অসহ্য যন্ত্রণা। এ যন্ত্রণা তাকে প্রতিদিনই মনে করিয়ে দেয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা।
আমাদের সময়কে নাসিমা ফেরদৌস বলেন, ওদিন পড়ন্ত বিকালে আওয়ামী লীগের জনসভায় সাইয়েদা তারেক দিপ্তি, আমাদের আইভি রহমানসহ আমরা সবাই উপস্থিত হই। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী, শেখ হাসিনা বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে যখন মাইক্রোফোনটি রাখবেন ঠিক তখনই এক বিকট শব্দ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটিতে পড়ে গেলাম। আইভি আপা মা বলে চিৎকার করে উঠলেন। চেষ্টা করলাম উঠে দাঁড়াব, কিন্তু শক্তি ছিল না। ওঠে বসলাম এবং ওখান থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।
এর মধ্য আরেকটা শব্দ। দেখি আমার পা টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যাচ্ছে। আমি তাকিয়ে দেখি আমার আশপাশে মানুষের রক্ত, শুধু লাশ আর লাশ। আজকে ১৭ বছর চলছে। এখনো আমার যন্ত্রণা কমেনি। গরমের সময় পা আগুনের মতো হয়ে যায়, আবার শীতে বরফের মতো ঠা-া। এখন এ যন্ত্রণা নিয়েই চলছি, এ যন্ত্রণা কাউকে বলে বোঝানো যায় না।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে নাসিমা ফেরদৌস এভাবেই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এখনো নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নাসিমা ফেরদৌসকে বরগুনা-ঝালকাঠি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মনোনীত করেন। বর্তমানে তিনি স্বামী হারুন অর রশীদ এবং এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার উত্তরায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার পৌর শহরের বড়ইতলায়।
নাসিমা ফেরদৌস মোবাইল ফোনে আমাদের সময়কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত চিকিৎসা করানোয় পা দুটি হারাতে হয়নি। যদিও হাঁটতে আমার বহুদিন সময় লেগেছে, দীর্ঘদিন বিছানায় ছিলাম। যতদিন বেঁচে থাকব বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে শেখ হাসিনার আদর্শে রাজনীতি করে যাব।
Leave a Reply