রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি বাসায় সুইটি নামে ১২ বছর বয়সী এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের মামলায় আইনজীবী নাহিদ জাহান আখি ও তার স্বামী তানভীর আহসান পাভেলের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাঈদ আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে ভুক্তভোগী শিশু সুইটি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন আসামিদের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত আজ রোববার শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। পরে শুনানি শেষে আসামিদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
এর আগে, গত ৩ জুলাই রাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে গৃহকর্মী সুইটি কৌশলে আসামিদের বাসা থেকে পালিয়ে তোপাখানা রোডে একজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তারা পুলিশে খবর দেন। ৪ জুলাই পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং ওই দম্পতিকে আটক করে। নির্যাতনের ঘটনায় ৫ জুলাই সুইটির বাবা শহিদ মিয়া শাহবাগ থানায় তানভীর আহসান পাভেল ও নাহিদ জাহান আখিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এদিনই ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তারা কারাগারেই ছিলেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, অভাবের কারণে ৯ মাস আগে সুইটিকে বাসার কাজে পাঠায় তার পরিবার। তার মাসিক বেতন ধার্য করা হয় তিন হাজার টাকা। দুই মাসের বেতন শহিদ মিয়া নিয়ে যান। এরপর সাত মাসে আর কোনো টাকা দেননি আসামিরা। এমনকি সুইটিকে দেখতে আসলেও দেখা করতে বা ফোনে কথা বলতে দেননি তারা। ঠিকমতো কাজ না করার অজুহাতে তানভীর আহসান পাবেল ও নাহিদ জাহান আখি সুইটিকে দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক মারধর করতেন। গত ১ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে লাঠি দিয়ে সুইটির হাত, পা, পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে জখম করা হয়। রাত ১০ টার দিকে সুইটির কাপড় খুলে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে সুইটির পশ্চাৎদেশে শক দেন আসামিরা।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পাভেল ও আইনজীবী নাহিদ রুটি তৈরির কাঠের বেলন দিয়ে সুইটির বাম হাতের কনুয়ের হাড় ভেঙ্গে দেন। নাহিদ সুইটির যৌনাঙ্গে বেলন দিয়ে নির্যাতন করেন। চোখ-মুখে ও যৌনাঙ্গে মরিচ লাগিয়ে দেন। সুইটি জীবন বাঁচানোর জন্য বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে খাবার না দিয়ে দুই দিন বাথরুমে আটকে রাখেন তারা।
এরপর গত ৩ জুলাই সুইটি বাথরুম থেকে বের হয়ে তাদের ঘরে থাকা বিস্কুট খেলে আসামিরা তার ওপর রাগান্বিত হয়ে রাত ১টার দিকে তাকে আবারও মারপিট করেন। সুইটি জীবন বাঁচানোর জন্য কৌশলে আসামিদের বাসা থেকে পালিয়ে এক ব্যক্তির বাসায় আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুইটিতে উদ্ধার করে।
Leave a Reply