1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

পদ্মা সেতুতে নকশা জটিলতায় উড়ালপথের পিলার ভাঙতে হচ্ছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। কোনো বাধা-বিপত্তি না এলে সড়কপথের সব প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে আগামী এপ্রিলের মধ্যেই। আর সেটি বছরের মাঝামাঝিতেই উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা। দ্বিতল সেতুর চার লেনের সড়কের ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি। আর নিচে স্প্যানের ভেতর দিয়ে ছুটবে ট্রেন। পদ্মা সেতু যেদিন চালু হবে, সেদিন থেকেই ট্রেন চালানোর কথা বলে আসছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তবে এখন পর্যন্ত কাজের যা অগ্রগতি, তাতে জুনের মধ্যে সেতুতে রেলপথ বসানোর কাজই শেষ হবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এর মধ্যে আবার রেললাইন নকশায় ধরা পড়েছে মারাত্মক ত্রুটি। ভাঙতে হচ্ছে সেতুর বাইরে উড়ালপথের একটি পিলার (ভায়াডাক্ট)। এ কারণে সেতুর সঙ্গে সংযোগ তৈরির কাজও পিছিয়ে গেছে। তবে নকশা নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পদ্মা সেতু ও পদ্মা রেলসংযোগের নকশা নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। রেল-রোড ইন্টারফেস ইস্যু নিয়ে রেলওয়ে ও সেতু বিভাগের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত গড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে উভয় সংস্থার এ সংক্রান্ত বিরোধ দূর হয়। এ বিষয়ে বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পদ্মার মাওয়া প্রান্তে উড়ালপথের (ভায়াডাক্ট-২) পিয়ার নম্বর ১৩ থেকে ১৬ পর্যন্ত মূল নকশায় তিনটি স্প্যান ছিল ৩৮ মিটার করে। সেখানে গার্ডারের ধরন ছিল প্রিকাস্ট বক্স। মূল নকশায় পিয়ার ১৪ ও ১৫-তে ছিল ছয়টি করে মোট ১২টি পাইল। পরে তিনটি স্প্যান পরিবর্তন করে ১৬ দশমিক ৬৯ মিটার, ৮০ দশমিক ৬২ মিটার ও ১৬ দশমিক ৬৯ মিটার করা হয়। পিয়ার ১৪ ও ১৫-এর মাঝের ৮০ দশমিক ৬২ মিটার স্প্যানটিতে গার্ডারের ধরন পরিবর্তন করে হয় স্টিল গার্ডার। ফলে পিয়ার ১৪ ও ১৫-তে পাইল বেড়ে হয় আটটি করে মোট ১৬টি। পদ্মার জাজিরা প্রান্তে দুটি পিয়ারের নকশায় ছিল ১৩ মিটার স্প্যানবিশিষ্ট কংক্রিট। এখানেও ১৩ মিটারের স্প্যানটি পরিবর্তন করে ১৬ মিটার করার সিদ্ধান্ত হয়।

তার আগে রেলওয়ের প্রস্তাবিত নকশা মানেনি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এর পরও রেলের পিয়ার ও ভায়াডাক্ট নির্মাণকাজ শুরু করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। সেতু কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে ওই অংশের কাজ বন্ধ রাখে রেলওয়ের নিযুক্ত ঠিকাদার। মাওয়া ও জাজিরা দুটি প্রান্তেই ছিল এ বিরোধ। এ বিষয়ে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘নকশা জটিলতা কেটে গেছে। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধীনে মূল সেতুতে রেলপথ এবং সেতুর দুই প্রান্তে ৫৩২ মিটার উড়ালপথ তৈরি করছে সেতু বিভাগ। সেতুতে রেলপথ তৈরির জন্য বসছে কংক্রিট সø্যাব। সে কাজ অবশ্য প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর বাইরে মাটি পর্যন্ত বাড়তি উড়ালপথ তৈরি, রেললাইন বসানো এবং ট্রেন পরিচালনার দায়িত্ব রেলওয়ের। সেতুর ওপরের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেললাইন বসাতে সময় লাগবে প্রায় ৯ মাস। পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ যদিও ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক স্থাপনের কাজ শুরুর অনুমতি। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২২ সালের মার্চে তারা এ বিষয়ে অনুমতি দিতে পারে। অর্থাৎ সেতু কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ শেষ করে রেল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেবে বাকি কাজ সারতে।

এদিকে গত ১৪ জুন সেতু বিভাগের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয় রেলওয়ের পক্ষ থেকে। পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্র বলছে, রেলপথের পাশে গ্যাস পাইপলাইন বসানোসহ আরও কাজ বাকি। রেল ও সেতুর আলাদা দুই সংস্থা এবং দুই ঠিকাদার একসঙ্গে কাজ করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের আগে রেলপথ বুঝিয়ে দেওয়া কঠিন। সে ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে একই দিনে ট্রেন চালু করা কঠিন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও বলছে, রেল-নিযুক্ত ঠিকাদারকে সময়মতো কাজ বুঝিয়ে না দিলে ‘ডে ওয়ান’ পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালু করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর যুক্তি হিসেবে প্রকল্পকর্তারা বলছেন, সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে ডেক ব্যবহার করে গ্যাস পাইপলাইন ও অন্যান্য নির্মাণকাজ শেষ করে মার্চের পর ঠিকাদারকে কাজ করতে দেবে। সাইট বুঝিয়ে দেওয়ার পর পদ্মা সেতুর সেটেলমেন্ট মনিটরিংয়ের জন্য তিন মাস এবং পদ্মা সেতুতে রেলপথ নির্মাণের জন্য ন্যূনতম ৬ মাস সময় দরকার।

অন্যদিকে জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু করতে চায় সরকার। যদিও পদ্মা সেতুর কাজ আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে চায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। গত মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদনে তারা বলেছে, এ সময়ের মধ্যে পিচ ঢালাইসহ পুরোপুরি যানবাহন চলাচলের উপযোগী হবে সেতু। সড়কবাতি ও আলোকসজ্জার কাজও শেষ হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। তবে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চালু এখন বড় চ্যালেঞ্জ। রেলকর্তারা অবশ্য বলছেন, চলমান করোনা সংকটে নির্মাণকাজ থেমে না থাকলেও কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, নদীতে পিলারের ওপর স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) দিয়ে তৈরি হয়েছে মূল সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর বাইরে দুই প্রান্তে ঢালু উড়ালপথের মাধ্যমে মূল সেতুকে মাটির সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। সেতুতে সø্যাব জোড়া দিয়ে রেলপথ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে গত ১২ জুন। এখন এর পাশ দিয়ে গ্যাসের পাইপ বসানোর কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও দু-তিন মাস। এ ছাড়া রেলপথের মেরামত ও তদারকির জন্য হাঁটার পথ তৈরি করা হচ্ছে। এ কাজ শেষ হতেও মাস দুয়েক লেগে যাবে।

গত বছর বন্যায় নদীভাঙনে মাওয়ার নির্মাণ মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর কিছু জটিলতা তৈরি হয়। আবার মাওয়া প্রান্তে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় খননের পর ২০ মিটারের মতো বাড়তি পলি জমেছে। সেখানে পুনরায় খনন করতে হবে। এ ছাড়া নদীশাসনের কাজ এখনো মূল সেতুর চেয়ে পিছিয়ে আছে। এবার অবশ্য যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তাতে প্রকল্প এলাকার ভেতরে ভাঙনের আশঙ্কা কম। তবে পদ্মা নদীর গতিপ্রকৃতি জটিল, ঝুঁকি থেকেই যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com