1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

পটুয়াখালীর ইউপি চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে প্রেমিকের কাছে সেই কিশোরী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১

পটুয়াখালীর বাউফলের সেই আলোচিত কনকদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে তালাক দিয়েছেন কিশোরী নাজমিন আক্তার ওরফে নাজনিন (১৪)। তিনি এখন তার প্রেমিক রমজানের সাথে তার নানা বাড়িতে আছেন। শনিবার রাতে চেয়ারম্যানের আয়লা বাজারস্থ বাসায় বসে তিনি তালাকনামায় স্বাক্ষর করেন। এরপর চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার নাজিননকে রমজানের মামাতো ভাই পলাশের জিম্মাায় তুলে দিয়ে শর্ত জুড়ে দেন যে অবশ্যই রমজানকে উপস্থিত করতে হবে যাতে নাজনিনকে গুম করে তাকে ফাঁসাতে না পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়নপাশা গ্রামের রমজান নামের এক যুবকের সঙ্গে চুনারপুল এলাকার নজরুল ইসলাম হাওলাদারের মেয়ে নাজনিন আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নাজনিনের বাবা ওই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। তিনি বিয়ষটি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের কাছে অভিযোগ করেন। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ওই এলাকার চুনারপুল বাজারে শুক্রবার শালিস বৈঠকের আয়োজন করেন। সেখানে রমজান ও নাজনিনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শালিস বৈঠকে নাজনিনকে দেখে চেয়ারম্যান শাহিন নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। নাজনিনের বাবা সম্মতি দেয়ায় জুমার নামাজের পর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়।

শাহিন হাওলাদারের ৬০ বছর বয়সে ১৪ বছর বয়সের এক কিশোরীকে বিয়ের ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। আলোচনার খোরাকে পরিণত হন তিনি। শাহিন হাওলাদার ২১ জুন অনুষ্ঠিত কনকিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।এদিকে প্রেমিকাকে হারিয়ে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রেমিক রমজান বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

ওই কিশোরী রোববার সকালে প্রতিনিধিকে জানান, ‘চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম পছন্দের ব্যক্তিকে বিয়ে করতে। কিন্তু বিয়ে করতে হয়েছে চেয়ারম্যানকে। আমি এক রাত চেয়ারম্যানের বাসায় থাকলেও কোনোভাবেই তাকে আমি স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি। আমি রমজানের কাছে যেতে চাই। কিন্তু চেয়ারম্যানের ভয়, রমজানের খালাত ভাই পলাশ আমাকে যেতে দিতে চায় না। এ মুহূর্তে রমজান এসেছে আমি তার সাথে যাব।’

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘সালিস বৈঠকে মেয়ের বাবা কোনোভাবেই মেয়ের পছন্দের ছেলের কাছে বিয়ে দিতে রাজি ছিল না। তাই কাজি ডেকে বিয়ে করেছিলাম। কোনো প্রভাব কিংবা জোর করিনি। যেহেতু মেয়ে বিয়েটা ভালোভাবে মেনে নিচ্ছিল না। তাই যিনি বিয়ে পড়িয়েছেন তার মাধ্যমে শনিবার সন্ধ্যার দিকে মেয়েটি আমাকে তালাক দিয়েছে।

নাজনিন আরো জানান, নানা ইউনুস কাজীর বাড়ির সামনে মসজিদে ইমামতি করতেন রমজান। এই রমজানের কাছে তিনি কোরআন শরীফ পড়তেন। কোরআন শরীফ পড়তে গিয়ে একপর্যায়ে রমজানের সঙ্গে তার প্রেম হয়। তিন বছর ধরে চলে এই প্রেম। এই ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরে কয়েক মাস রমজানের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পরে একটি মাধ্যমে রমাজানের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ হয়। ২৫ জুন সালিশ বৈঠকের জন্য তিনিসহ তার ও রমজানের পরিবারের অভিভাবকরা চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের বাড়িতে আসেন। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি, একটি অঘটন ঘটতে যাচ্ছে।

নাজনিন আরো জানান, রমজানের বাবাকে আমার বাবা বিবাহের জন্য আসতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা আসতে দেরি করায়, ১৮ মে তার মা-বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী তার দাদীর ফুফাতো বোনের ছেলে তাঁতেরকাঠি গ্রামের সোহেল আকনের কাছে বিয়ে দেন। বিয়ের পর নুরাইনপুর বন্দরে বসে তাদের এক ঘণ্টার জন্য দেখা হয়েছিল। কোরবানির ঈদে তাকে স্বামীর বাড়ি তুলে দেয়ার কথা ছিল। তিনি বিয়েতে রাজি ছিলেন না বলেই রমজানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। এরপর দুজনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৪ জুলাই তারা ঘর ছাড়েন। চুনারপুল নামক এলাকা থেকে বাইকযোগে রমজান আর তিনি চলে যান কনকদিয়া ইউনিয়নের কুম্বখারী রমজানের মামা শাহ আলমের বাড়িতে। ওই বাড়িতে তারা দুদিন ছিলেন। পরে তার বাবা নজরুল ইসলাম বিষয়টি কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে অবহিত করেন। তিনি শুক্রবার সালিশ বৈঠকে বিষয়টি ফয়সালা করে দেবেন বলে জানান।

নাজনিন জানান, ওই কথা অনুযায়ী উভয় পরিবারের লোকজন সকালে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদের বাড়ি যান। এ সময় চেয়ারম্যান তাকে অন্য একটি রুমে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘ওই ছেলের তো (রমজানের) টাকা-পয়সা নেই। তুমি তার ঘরে গিয়ে সুখী হতে পারবা না। বরং আমাকে বিয়ে করলে সুখী হবে।’

নাজনিন জানান। তিনি তার কথায় রাজি হননি। অথচ এরপর কাজী ডেকে এনে তাই করা হলো। এর পর ঘটল যত অঘটন। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার নিজে তাকে বিয়ে করবেন বলে জানান। তার যে কথা সেই কাজ। তাকে একরকম প্রতারণা করেই বিয়ে করেন। ৫ লাখ টাকা কাবিন করেন। বিয়ের রাতে চেয়ারম্যান তার বেড রুমে ঢুকতে চাইলে তিনি তাকে ঢুকতে দেননি। ভেতর থেকে দরজা আটকে দেন।

শনিবার রাতে শাহিন হাওলাদারের ছেলে তুষার এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ও প্রশাসনের চাপে শাহিন হাওলাদার তাকে তার জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দিতে রাজি হন। রাতেই ওই কাজীকে ডাকা হয়। এরপর তার কাছ থেকে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার নিজেই তাকে রমজানের মামাত ভাই পালাশের জিম্মাায় তুলে দেন। ওই সময় তার নানা ইউনুস কাজী, বাবা ও সাবেক ইউপি মেম্বার নুরুল ইসলাম তাকে বাবার বাড়ির মাঝ পথ পর্যন্ত এগিয়ে দেন। সেখান থেকে তিনি রমজানের ওই মামা শাহআলমের বাড়িতে চলে যান। রমজানের মামাত ভাই পলাশ তাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com