ক্রয় ও উপহার মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ করোনা ভাইরাসের টিকা এসেছে, তা চাহিদা থেকে অনেক কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির ১ কোটি ১৪ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। আর টিকার জন্য মোট রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ। অর্থাৎ নিবন্ধনকারীদের দুই ডোজ টিকা দিতে প্রয়োজন মোট ১ কোটি ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮ ডোজ। সেই হিসাবে এখনো ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮ ডোজ টিকা ঘাটতি আছে। তার ওপর প্রতিনিয়ত টিকার চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সরকার অনেক চেষ্টা-তদবির করেও চাহিদা অনুযায়ী টিকা সংগ্রহ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভারত থেকে কোভিশিল্ড টিকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ পেয়েছে। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ ক্রয় ও ৩২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া চীন থেকে উপহার হিসেবে সিনোফার্মের তৈরি ১১ লাখ ডোজ ও কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকাসহ মোট ১ কোটি ১৪ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা পেয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি একটি দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যায়, তাহলে সে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হতে পারে। সেই হিসাবে বাংলাদেশ পরিকল্পনা করে, দেশের ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষকে টিকা প্রদানের। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনতে গত বছরের ৫ নভেম্বর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। কথা ছিল সেরাম থেকে এই টিকা মাসে ৫০ লাখ করে ছয় মাসে দেশে আসবে।
এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে জাতিসংঘের উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসাবে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ক্রয় ও কোভেক্স থেকে পাওয়া টিকা প্রতিজনকে ২ ডোজ করে দিলে দেশের ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ টিকা পাবে। এরপর প্রয়োজন হলে আরও টিকা আমদানি করা হবে। কিন্তু ভারতে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াল রূপ ধারণ করায় দেশটি টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সমস্যায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। ভারতের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ে কোভ্যাক্স কর্মসূচিতেও। সেরাম থেকে ক্রয়কৃত টিকার প্রথম চালান (৭০ লাখ ডোজ) আসার পরই বন্ধ হয়েছে আমদানি। যার ফেরে টিকা স্বল্পতায় শুরুতে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম ও পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হয় সরকারকে। প্রথম ডোজে কোভিশিল্ড টিকা নেওয়া বহু মানুষের এখনো দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন আগামী আগস্ট মাসে কোভিশিল্ডের ১০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। ওই টিকা দিয়ে যারা দ্বিতীয় ডোজ পায়নি তাদের দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ এপ্রিল টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ওইদিন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। যারা প্রথম ডোজ পেয়েছে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলে সরকারের টিকা দরকার ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৩০ ডোজ। কিন্তু এর বিপরীতে টিকা পেয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। প্রথম ডোজ গ্রহণকারী প্রত্যেককে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলে সরকারের কাছে আরও ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৩০ ডোজ টিকার দরকার। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকা না থাকায় রাজধানীর ৪৭টি কেন্দ্রের ৩২টি এবং রাজধানীর বাইরে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫১টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব কেন্দ্রে যারা নিবন্ধন করেছেন তারা উদগ্রীব হয়ে আছেন কবে নাগাদ টিকা পাবেন।
বাংলাদেশকে মোট ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা উপহার দিয়েছে চীন। এর মধ্যে ৩০ হাজার ডোজ বাংলাদেশে কর্মরত চীনা কর্মীদের দেওয়া হবে। বাকি ১০ লাখ ৭০ হাজার ডোজ টিকা ৫ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে দেওয়া যাবে। এই প্রাপ্তির অগ্রাধিকার তালিকায় ১০ ক্যাটাগরির মানুষ রয়েছে। এই ১০ ক্যাটাগরির মধ্যে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে এখন পর্যন্ত কোনো টিকা পাননি; সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা যারা আগে টিকা নেননি; বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মী; সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী; সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস ও সরকারি আইএইচটির শিক্ষার্থী; সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী; বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা; ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী; সারাদেশে কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড-পৌরসভার কর্মী।
সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ছয়টি টিকা জরুরি আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এসব টিকার মধ্যে রয়েছে- অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি, যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানির তৈরি ফাইজার, চীনের তৈরি সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক টিকা ও জনসনের তৈরি টিকা।
Leave a Reply