ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চিংড়ি চাষিরা। কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও কাকশিয়ালিসহ বিভিন্ন নদ-নদীর ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চ জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে সুন্দরবন সংলগ্ন চারটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। প্লাবিত হয় প্রায় ৭ হাজার চিংড়ি ঘের। ভেসে গেছে ৫৫ কোটি টাকার মাছ।
গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উপকূলবাসীকে সর্বশান্ত করে দিয়ে গেল। এমন অবস্থায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে সুদমুক্ত ঋণ চান ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ও চিংড়ি চাষিরা।
গত বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারে নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়ে সাতক্ষীরার উপকূলে। এতে সুন্দরবন সংলগ্ন কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও কালিন্দী নদীর ভাঙন কবলিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৩টি পয়েন্টের ২০ পয়েন্ট ভেঙে এবং শতাধিক স্থানে জোয়ারের পানি উপচে পড়ে প্রায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়। হু হু করে মুহূর্তের মধ্যে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে রাস্তাঘাট খাল-বিল এবং বসতবাড়িসহ প্রায় ৭ হাজার চিংড়ি ঘের তলিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নের ১৪৫০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৫৬০টি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। আর শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, কৈইখালী, নুরনগর ইউনিয়নের ৯৫০ হেক্টর জমির প্রায় ৩ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। লোনা পানির কারণে এসব অঞ্চলে ফসল ফলে না। কিছু এলাকায় লবণসহিষ্ণু ধান উৎপাদন হলেও জ্যৈষ্ঠের আগেই বৈশাখ মাসে কৃষকদের ঘরে ধান উঠে গেছে। তাই কৃষিপণ্য ফসলের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এছাড়া কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মৎস্য ঘের। সর্বশান্ত হয় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিরা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব মতে দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ছোটবড় ৭ হাজারের মতো মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেনু পোনা ও হ্যাচারি মালিকরা। ভেসে গেছে আনুমানিক ৫৫ কোটি টাকার মাছ।
তিনি আরও জানান, গতবছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে চিংড়ি ও মৎস্য চাষিদের যে ক্ষতি হয়েছিল, সেটি কাটিয়ে ওঠার আগেই ইয়াস তাদের সর্বশান্ত করে দিয়েছে। তাই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সল্প সুদে মৎস্য চাষিদের ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে প্রত্যাশা করেন তিনি। এছাড়া খুব শিগগিরই টেকসই দীর্ঘমেয়াদি বেড়িবাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ আবারও প্রকৃতির সাথে লড়াই করে স্বাভাবিক জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply