1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২০ পূর্বাহ্ন

টিকার জন্য ‘মরিয়া’ কূটনীতি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

করোনাভাইরাসের টিকার জন্য জোর কূটনীতি চালাচ্ছে বাংলাদেশ। মূলত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি মেটানোর জন্যই চলছে এই মরিয়া চেষ্টা। বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের টিকার মজুদ সম্পর্কে ধারণা নেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে টিকা পাওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা থাকা সব সোর্সের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে একাধিক পথে। অবশ্য নতুন গ্রহীতাদের জন্য আগামী কয়েকমাসের মধ্যে টিকা সংস্থানের আশ্বাস ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। সে হিসাবে আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষের দিকে আর টিকার সংকট থাকবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়ার নতুন রাষ্ট্রদূত দায়িত্ব নিয়ে দেখা করতে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিকা নিয়ে কথা তোলেন। মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার লোকসংখ্যা ২৫ মিলিয়ন। কিন্তু তোমাদের দেশে নাকি ৯৩ মিলিয়ন টিকা আছে।  তোমাদের ২৫ মিলিয়নের মধ্যে সবাইতো টিকা নেবে না, হয়তো বেশি হলে লাগবে ১০-১১ মিলিয়ন। বাকি এই ৮০ মিলিয়ন দিয়ে কী হবে। মন্ত্রী সরাসরিই রাষ্ট্রদূতকে বলেন, বাড়তি টিকা রেখে দেওয়া খুবই অন্যায়, তোমাদের উচিত, এটা আমাদের দিয়ে দেওয়া।  অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানায়, কানাডার কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। কানাডার সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদনও করা হয়েছে। কারণ কানাডার কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বাড়তি ভ্যাকসিন রয়েছে। কানাডার পক্ষ থেকে সরাসরি বাংলাদেশকে না দিয়ে বাড়তি টিকা বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দেওয়ার কথা জানানো হলেও হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সম্প্রতি ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশনার বেনাওয়ে প্রিফন্টেইনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এ ইস্যুতে তার সরকারের সঙ্গে জরুরি যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও প্রস্তাব দেন কানাডা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আলাদাভাবে টিকা দেওয়ার জন্য হলেও সহায়তা করতে পারে।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনও টিকার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভ্যাকসিন সম্পর্কিত মন্ত্রীর দফতরে জোর লবিং চালিয়েছে। যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে ১৬ লাখ অক্সফোর্ডের টিকা পেতে গত মাসে দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক চিঠিতে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথবিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ জানিয়েছেন, তাদের পক্ষে বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা নেই উল্লেখ করে এই আবেদন নাকচ করা হলেও চেষ্টা থামানো হয়নি। পরে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, উৎপাদনে সমস্যা থাকলেও আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাজ্য সরকার চেষ্টা করলে এই পরিমাণ টিকার ব্যবস্থা করতে পারবে। আমরা মনে করি, তাদের সেই সামর্থ্য আছে। যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করে। তাদের উচিত, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে সাহায্য করা। আমরা অনেক টিকা চাইছি না, আমরা শুধু অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৬ লাখ ডোজ চাইছি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানান, অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজের চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র তার মজুদ থাকা আট কোটি টিকা বিভিন্ন  দেশকে দিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও এক্ষেত্রে বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমেই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সবভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে চেষ্টা করা হচ্ছে। দূতাবাস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি এবং মার্কিন গণমাধ্যমকেও কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। দেড় হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি যারা এখন মার্কিন নাগরিক তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশকে টিকা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যমে সিএনএনকে দেওয়া এক লাইভ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রয়োজনের মাত্রা জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের টিকা সরবরাহের অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশ নেই। যুক্তরাষ্ট্র মূলত ভারত, স্পেনসহ কয়েকটি দেশকে এই সহায়তা দিচ্ছে। আর কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশকে আগামীকাল (রবিবার) পাঠানো হচ্ছে ফাইজারের মাত্র ১ লাখ ডোজ টিকা। চীন  থেকে আসা টিকাও বাংলাদেশের দ্বিতীয় ডোজের সংকট দূর করতে পারছে না।

জানা যায়, বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি ডোজ অক্সফোর্ডের করোনা টিকা সরবরাহের চুক্তি করেছিল। সেরাম ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করার কথা ছিল। সে হিসাবে টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকা রপ্তানি বন্ধ রাখে ভারত। এতে ১৬ লাখ বাংলাদেশি দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সংকট। এই সংকট থেকে উদ্ধারে ভারতকে রপ্তানি না করে ‘উপহার’ দেওয়ার কথাও বলেছে বাংলাদেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com