করোনা মহামারীর মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বাজেট প্রণয়ন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মহামারীর কারণে ব্যবসার মন্দায় রাজস্ব আদায় কমেছে। আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির এই পরিমাণ সংশোধিত চলতি বাজেটের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ঘাটতির অর্থ জোগাতে নতুন বাজেটে সরকার ব্যাংকিং খাতের ঋণনির্ভরতা কমিয়ে বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে যাচ্ছে। জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এই হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ কম। অন্যদিকে নতুন বাজেটে বৈদেশিক অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটের তুলনায় এই হার ৩৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। চলতি বাজেটে বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা হিসেবে ৯২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। অবশ্য করোনার এই সময়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ বেড়েছে। আসছে বাজেটেও বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে।
খসড়া রূপরেখা অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। জিডিপি অংশ হিসেবে ঘাটতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ, চলতি বছর বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এদিকে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম আট মাস
জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি রয়েছে, যা বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দেবে। ফলে আগামী অর্থবছরের জন্য রেকর্ড পরিমাণ এই ঘাটতি সামলাতে বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণের প্রতি নির্ভরতা বাড়াতে চায় সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ মহামারীসহ সার্বিক ব্যয় মেটাতে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে প্রায় ৬৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বিদেশি উৎস থেকে ৩০ শতাংশ এবং ৭০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ খাত (ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল) থেকে নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে গত বছরের তুলনায় ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সার্বিক ঋণগ্রহণের হার অর্থনীতিতে এখনো কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পাশাপাশি ঋণগ্রহণ ও পরিশোধকারী হিসেবে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। এ জন্য বাজেট ঘাটতি মেটাতে ঋণ বাড়লেও অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি খুব একটা বাড়বে না।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের জন্য ৩৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের (প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা) সহায়তার অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলো। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ২৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার বেশি। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী অর্থবছরের জন্য গৃহীত সর্বোচ্চ বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণ পাওয়ার পরিকল্পনা বাজেট ঘাটতি মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাজেটে ৬ শতাংশ ঘাটতি স্বাভাবিক সময়েও চিন্তিত হয়ে পড়ার মতো হার নয়। যেসব খাতে মহামারীর কারণে অতিরিক্ত তহবিলের প্রয়োজন, সেসব খাতে যতক্ষণ এই ৬ শতাংশ ঘাটতি যাচ্ছে, ততক্ষণ কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
Leave a Reply