গত বছর ঈদে টিভি চ্যানেলে নতুন কোনো আয়োজন ছিল না। ঘরবন্দি মানুষের দিন কেটেছে পুরনো অনুষ্ঠান দেখে। এই সুযোগে আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা বাড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর। এবারের ঈদেও একই শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কারণ যখন থেকে ঈদ অনুষ্ঠানের শুটিং শুরু হওয়ার কথা, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তখনই (৫ এপ্রিল) সাত দিনের ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। এর পর ১৪ এপ্রিল থেকে আট দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ জারি করা হয়, যা চলবে ১৬ মে পর্যন্ত। লকডাউন শুরুর পর কয়েক দিন অনেক তারকাই ঈদের কাজ বাদ দিয়ে বাসায় অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু দিন যত গড়াতে থাকে, ততই যেন ঈদের আমেজ ফিরতে থাকে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে ঈদের নাটক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শুটিং। তাই এবার সব সংশয় উড়িয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদ আয়োজন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি টিভি চ্যানেলেই নতুন নাটক-টেলিছবির পাশাপাশি রয়েছে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, পাপেট শো, সরাসরি গানের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন। এসব কারণেই এবারের ঈদ আয়োজন পাচ্ছে নতুন মাত্রা। আয়োজনে নতুন মাত্রা থাকলেও নাটক-টেলিছবিতে দেখা যাবে সেই পরিচিত মুখগুলোকেই। মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মেহজাবিন চৌধুরী, আফরান নিশো, তানজিন তিশা, তাহসান খান, শবনম ফারিয়া, তৌসিফ মাহবুব, তাসনিয়া ফারিন, মিশু সাব্বির, সাফা কবির, জোভান আহমেদ, কেয়া পায়েল, মুশফিক আর ফারহানরা এবার বেশি কাজ করেছেন।
করোনার কারণে গত বছর বেশিরভাগ টিভি চ্যানেলগুলো পুরনো নাটক-টেলিছবি প্রচার করলেও এবার রয়েছে নতুন সব আয়োজন। বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ সাজানো হয়েছে ইতিপূর্বে প্রচারিত ঈদের কয়েকটি পর্ব থেকে সংকলন করে। শুধু সংকলিতই নয়, শুরুতে এবং শেষে রয়েছে বিশেষ চমক; যা নতুনভাবে ধারণ করে সংযোজন করা হয়েছে এই বিশেষ পর্বে। বরাবরের মতো এবারও ‘ইত্যাদি’ শুরু করা হয়েছে সেই একই গান দিয়ে- ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।’ অনুষ্ঠানটি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন, স্পন্সর করেছে কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড। বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে ঈদের পরদিন রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর একযোগে প্রচারিত হবে এটি। ‘আনন্দমেলা’ উপস্থাপনায় চমক হিসেবে থাকছেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। ঈদের দিন রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদের পর এটি প্রচার হবে। আট দিনব্যাপী অনুষ্ঠান রয়েছে চ্যানেল আইতে। এ অনুষ্ঠানমালায় থাকছে একটি মুক্তদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রসহ ৮টি নতুন চলচ্চিত্র, ১০টি টেলিছবি, ১৫টি নাটক এবং আবদুল হাদীর একক সংগীতানুষ্ঠান। আরও থাকছে শাইখ সিরাজের ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’ এবং ফরিদুর রেজা সাগরের আট পর্বের ‘কক্সবাজারে কাকাতুয়া’র পুনঃপ্রচার।
এনটিভিতে প্রচার হবে ১৪টি সিনেমা, ২ ধারাবাহিক এবং ২০-২৫টি নাটক-টেলিছবিসহ সংগীতানুষ্ঠান, গেইম শো ও নৃত্যানুষ্ঠান। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বৈশাখী টেলিভিশনের আয়োজনে থাকছে ১৪টি নাটক, ১৪টি সিনেমা, জনপ্রিয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীতানুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। নাটকগুলোর মধ্যে ৭টি একক এবং ৭ পর্বের ৬টি ধারাবাহিক। ৬টি নাটকেরই গল্প লিখেছেন বৈশাখী টিভির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক টিপু আলম মিলন। এর মধ্যে ৩টি একক ও ৩টি ধারাবাহিক। ঈদ আয়োজন সম্পর্কে বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান তারেক আখন্দ বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও আট দিনব্যাপী ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানমালা থাকছে। উল্লেখযোগ্য আয়োজনের মধ্যে রয়েছে- ৭ পর্বের ৬টি ধারাবাহিক, ২৮টি একক, ৭টি টেলিছবি, ৯টি চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান। আশা করি, দর্শকরা ঘরে বসে আমাদের আয়োজন উপভোগ করবেন।’ প্রতিবছরের মতো জমকালো আয়োজন থাকছে নাগরিক টিভিতে। ঈদের ছুটি ও ঘরবন্দি জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে চ্যানেলটি আয়োজন হতে পারে দর্শকদের জন্য বাড়তি পাওয়া। এবারের আয়োজনে থাকছে একাধিক বাংলা সিনেমা। এগুলোর মধ্যে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানেরই ১৮টি সিনেমা রয়েছে। এ ছাড়া থাকছে নাটক, সরাসরি গানের অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। সাত দিনব্যাপী আয়োজন রয়েছে মাছরাঙা টিভিতে। এর মধ্যে রয়েছে- ২১টি একক নাটক, ৭টি চলচ্চিত্র, ৭টি সিনেমা, কার্টুন সিরিজসহ বেশ কিছু আয়োজন। এ ছাড়া বিশেষ আয়োজন রয়েছে এটিএন বাংলা, দেশ টিভি, আরটিভি, দীপ্ত টিভি, এশিয়ান টিভি, একুশে টিভিসহ অন্যান্য চ্যানেলে।
Leave a Reply