শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে, ভারতীয় বাংলার মসনদে বসছেন কে। আজ রোববার সকাল আটটা (বাংলাদেশ সময় সাড়ে আটটা) থেকে শুরু হয় এ ভোট গণনা। গণনা চলতি হিসেব অনুযায়ী ১৯৪ আসন নিয়ে এগিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৯৬ আসন। ভারতীয় গণমাধ্যম এপিবি আনন্দর লাইভ ভোট পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এখন পর্যন্ত প্রথম রাউন্ডের গণনা শেষ হয়েছে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে। এতে তৃণমূল-বিজেপির প্রার্থীদের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই স্পষ্ট। তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও বলা যাচ্ছে না, তারাই গদিতে বসছে। কারণ, প্রতিটি কেন্দ্রে কয়েক রাউন্ড ভোট গণনা হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নন্দীগ্রামে মমতা থেকে এগিয়ে আছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। প্রথম রাউন্ডে তিনি এগিয়ে আছেন ১ হাজার ৪৯৭ ভোটে। রাজ্যে কংগ্রেস-বাম দল ও আইএসএফের গড়া সংযুক্ত মোর্চা এগিয়ে আছে ৬টি আসনে।
বিধানসভার মোট আসন ২৯৪টি থাকলেও নির্বাচনের মধ্যে দুই প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় দুটি আসনের নির্বাচন স্থগিত হয়। ফলে, আজ ২৯২টি আসনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় শাসন কায়েম করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যাণার্জী। তবে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ বুঝিয়ে দেয়, পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশের মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে।
৮ দফায় অনুষ্ঠিত এই ভোট নিয়ে পুরো ভারতজুড়ে এবার ছিল বেশ আলোচনা। বিগত বছরগুলোতে পশ্চিমবঙ্গে পদ্ম ফোঁটেনি। এবার সে সুযোগ করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মমতাও পিছিয়ে থাকেন নি। খোঁড়া পা নিয়ে বেশ দৌঁড়েছেন। এ দৌঁড়ের মূল ফল কী, জানা যাবে পরে। তবে, তার আগে জরিপ বলছে, ভারী ভোটে জিতবেন দিদি। অবশ্য, বিজেপিও খুব বেশি পিছিয়ে নেই।
গত ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই রাজ্যে ৮ দফায় বিধানসভার ২৯২টি আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার জন্য রাজ্যের ২৩টি জেলায় ১০৮টি গণনাকেন্দ্রে ভোট গণনা করা হবে। আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ভোট গণনাকেন্দ্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। গণনাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে ৯০টি গণনাকেন্দ্র ছিল, এবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০৮টি। ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া গণনাকেন্দ্রে ঢোকার অনুমতি নেই রাজ্য পুলিশেরও। ভোট গণনা শেষ হলে রিটার্নিং অফিসার, গণনা পর্যবেক্ষক, কাউন্টিং এজেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থী এবং এজেন্টরা সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন। নিয়োগ করা হয়েছে ২৫৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাদের পোলিং এজেন্টসহ যেসব ভোটকর্মী ভোট গণনায় দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের সবাইকে করোনার টিকার দুটি ডোজ অথবা আরটি–পিসিআর বা অ্যান্টিজেন নমুনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে।
শুক্রবার দুপুরে দলের অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘খাতা–কলম নিয়ে ঢুকতে হবে ভোট গণনাকেন্দ্রে। একবার ভোট গণনাকেন্দ্রে ঢুকে গেলে আর ছাড়া যাবে না বসার টেবিল–চেয়ার। ওখানেই বসে সবকিছুর ওপর নজর রাখতে হবে। কেউ কিছু দিলে খাবেন না। আমাদের জয় নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা জিতছি। ক্ষমতায় আসছি। সেই ইঙ্গিত সব বুথফেরত সমীক্ষা বলে দিয়েছে। তাই চিন্তা করবেন না, জয় আমাদের নিশ্চিত। তাই ওদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে কান দেবেন না। ওদের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।’
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে করোনায় মারা গেছেন ৯৬ জন আর আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৪১১ জন।
Leave a Reply