জরুরি প্রয়োজনে টেন্ডার ছাড়াই কেনা হচ্ছে চার লাখ ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স। ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ প্রতিটি লাইসেন্সের ক্রয়মূল্য হবে ৪৭২ টাকা ৬০ পয়সা। ফলে চার লাখ লাইসেন্স কিনতে মোট ব্যয় হবে ১৮ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে এ লাইসেন্স ক্রয়ের প্রস্তাবটি আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ‘অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে পাঠানো সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিদ্যমান ক্রয়চুক্তির আলোকে ২০১৬ সালের জুন থেকে ‘টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড’ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলো ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর পরিসংখ্যান ও সম্ভাব্য ভবিষৎ চাহিদা বিবেচনা করে প্রতি বছর গড়ে তিন লাখ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হবেÑ এমন ধারণা করে পাঁচ বছরে মোট ১৫ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল; কিন্তু এনফোর্সমেন্ট তৎপরতা জোরদার, বিআরটিএ-সহ জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং কোম্পানির সার্ভিস পরিচালনা শুরু হওয়ায় মোটরযানের বিশেষত মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন বৃদ্ধি পায় এবং একই সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্সের চাহিদাও বেড়ে যায়। ফলে চুক্তি সম্পাদনের চার বছরের কম সময়ের মধ্যেই ওই প্রতিষ্ঠান জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৪১ হাজার ১০৯টি পলিকার্বনেট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড প্রিন্ট ও সরবরাহ করেছে। অর্থাৎ চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে আর মাত্র ৫৮ হাজার ৮৯১টি স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ অবশিষ্ট রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
সার-সংক্ষেপে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রকল্পটির ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী বিআরটিএ গত বছরের ১০ জুন আহ্বানকৃত টেন্ডার-সংক্রান্ত মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড (এমএসপি)’ অভিযোগ করে। সেই সময় মোট ৩৭টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দলিল ক্রয় করলেও চূড়ান্তভাবে দরপত্রে মোট তিনটি সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এরমধ্যে ফ্রান্সভিত্তিক সেলফ স্মার্টকার্ডস অ্যান্ড সলিউশনস রেসপন্সিভ হয়। অন্য দু’টি প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ার মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং মালয়েশিয়ার প্রিসটাকান ন্যাশনাল মালয়েশিয়া বারহাডের দরপত্র নন-রেসপন্সিভ হয়।
দরপত্র নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়, রেসপন্সিভ প্রতিষ্ঠান সেলফ স্মার্টকার্ডস অ্যান্ড সলিউশনস দরপত্রে তাদের মানদণ্ডের যে সনদ দাখিল করে তা ঠিক নয়। দরপত্রে ওয়ারেন্টি ১০ বছর উল্লেখ থাকলেও প্রস্তাবে পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি উল্লেখ রয়েছে। একই সাথে অথরাইজড সিগনেটরি হিসেবে যার নাম স্বাক্ষরিত হয়েছে, দরপত্রে তার স্বাক্ষর নেই, অন্য একজনের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়।
অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় ওই দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রস্তাবটি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধিত চাহিদা অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহে নতুন প্রতিষ্ঠান মনোনীত করতে গত ২৩ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। ফলে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণসহ বিভিন্ন কারিগরি কাজ সম্পন্ন করে লাইসেন্স পেতে প্রায় ছয় মাস সময় লেগে যাবে। অন্য দিকে আলোচ্য সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের চাহিদা প্রায় সাড়ে সাত লাখ। এর বিপরীতে বর্তমানে প্রিন্ট পেন্ডিং ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা চার লাখ আট হাজার ৯০০টি এবং ছাপানোর অনুমতির জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স। এ ছাড়া আগামী ছয় মাসে আরও ছয় লাখ আবেদন জমা পড়তে পারে।
এ মুহূর্তে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন ভেন্ডর কর্তৃক কার্ড সরবরাহ পাওয়ার আগে পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালে আনুমানিক সাত লাখ ৫০ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন। চলমান টেন্ডার-প্রক্রিয়ায় ৪০ লাখ কার্ড সংগ্রহ করা হবে এবং ৫৮ হাজার ৮৯১টি কার্ড বিদ্যমান চুক্তির আওতায় ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান থেকে পাওনা রয়েছে। কাজেই সরাসরি ক্রয়প্রক্রিয়ায় আপাতত চার লাখ কার্ড অতি জরুরি বিবেচনায় সংগ্রহ করা প্রয়োজন বলে বিআরটিএ জানিয়েছে বলে সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, বিদ্যমান চুক্তিমূল্য অনুযায়ী চার লাখ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের মূল্য দাঁড়ায় ভ্যাট ও আইটিসহ ১৮ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সরাসরি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই মূল্য নেগোসিয়েনশনযোগ্য।
Leave a Reply