1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

ব্ল্যাকমেইল করে ব্যবসায়ীর বাড়িগাড়ি হাতিয়ে নেন স্বর্ণা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১

সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে এবং তার বাড়িগাড়ি ও কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে করা প্রতারণা মামলায় মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণা (৪১) ও তার মা এবং ছেলেকে জেলগেটে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে আদালতে হাজির করে তাদের বিরুদ্ধে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. দুলাল হোসেন।

শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মাহমুদা আক্তারের আদালত ওই তিনজনের রিমান্ড নামঞ্জুর করে জেলগেটে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন বলে জানান আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মনির আহমেদ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- স্বর্ণার মা আশরাফি ইসলাম শেইলি (৬০) ও ছেলে আন্নাফি (২০)। গ্রেপ্তার ওই ৩ জন বর্তমানে আদালতের হাজতখানায় রয়েছেন।

ভুক্তভোগী প্রবাসী ব্যবসায়ী কামরুল হাসানের অভিযোগ, খালাতো ভাই মাহমুদুল হাসান নীড়ের মাধ্যমে তার প্রথম পরিচয় হয় স্বর্ণার। এরপর স্বর্ণার অনুরোধেই তাদের যোগাযোগ হয় ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে। নিজেকে বিধবা, এক সন্তানকে নিয়ে অসহায় দাবি করে ওই প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান স্বর্ণা। বাড়িগাড়ি এমনকি স্বর্ণালঙ্কার কেনার অজুহাতে বিভিন্ন সময় কামরুলের কাছ থেকে স্বর্ণা হাতিয়ে নেন ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখানেই শেষ নয়, দেশে ফেরার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার সি-ব্লকের বাসায় ডেকে এনে ফলের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কামরুলকে অচেতন করে এ প্রতারক চক্রের সদস্যরা। ফাঁদে ফেলে স্বর্ণা ও ওই ব্যবসায়ীকে পাশে অর্ধউলঙ্গ করে শুইয়ে ছবি তুলে তা ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে সম্মানহানি ও ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে জোর করে বিয়েও করেন। পরে ওই ব্যবসায়ী অর্থ ফেরত চাইলে মডেল স্বর্ণা জানান, তিনি তাকে তালাক দিয়েছেন।

এ সংক্রান্তে পুলিশের কাছে একটি তালাকনামাও দেন স্বর্ণা। পরে সিটি করপোরেশনে খোঁজ নিয়ে ব্যবসায়ী কামরুল জানতে পারেন স্বর্ণার ওই তালাকনামা জাল। এভাবে প্রতারণা করে এ পর্যন্ত স্বর্ণা এক আইনজীবীসহ ৩ জনকে বিয়ে করে হাতিয়ে নিয়েছেন তাদের সর্বস্ব। এসব অপকর্মে স্বর্ণাকে সহযোগিতা করেন তার মা আশরাফি ইসলাম শেইলি, ছেলে আন্নাফিসহ নাহিদ হাসান রেমি (৩৬), ফারহা আহমেদ এবং ৩৭ বছরের এক যুবক। বিয়ের ফাঁদ পেতে সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়া এ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ওই প্রবাসী ব্যবসায়ী। ওই মামলায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকা থেকে স্বর্ণা, তার মা ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী কামরুল হাসানের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। থাকেন রাজধানীর পল্লবীতে। সৌদি আরবে ব্যবসা শুরু ২০০৫ সালে। বর্তমানে মক্কায় রাবিয়াহ আল-মদিনা ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ফ্রুটস ইমপোর্ট ও কন্সট্রাকশন প্রতিষ্ঠান কেএম জুয়েল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান তিনি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্বর্ণার সঙ্গে পরিচয়ের পর বিধবা ও এক ছেলের মা দাবি করে চলচ্চিত্র ও নাট্য অভিনেত্রী এবং উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় নিজের দেন। তিনি ফেসবুক আইডি দিয়ে প্রবাসী ওই ব্যবসায়ীকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে অনুরোধ করেন। ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন ওই ব্যবসায়ী। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বর্ণাকে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট দিয়ে ফ্রেন্ড লিস্টে যুক্ত হন। এরপর শুরু চ্যাটিং। প্রায়ই ম্যাসেঞ্জারে ফোন করে সিনেমা জগতে খারাপ অবস্থা চলছে বলে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন স্বর্ণা। ওই ব্যবসায়ী তাকে এড়িয়ে চলা শুরু করলে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে কল করতে থাকেন। এভাবে চলতে থাকে তাদের যোগাযোগ। উবারে গাড়ির ব্যবসা করবে বলে টাকা ধার দিতে প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করেন। অনেকটা অতিষ্ঠ হয়ে পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে ২০১৮ সালের ৫ ও ৬ নভেম্বর এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে আড়াই লাখ টাকা, ইউসিবি ব্যাংকে ধানমন্ডি শাখার অ্যাকাউন্টে ৮ লাখ এবং ৮ নভেম্বর প্রবাসী এক বন্ধুর স্ত্রীর কাছ থেকে ১২ লাখসহ মোট সাড়ে ২২ লাখ টাকা ধার দেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে স্বর্ণা আবার হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে ওই ব্যবসায়ীকে জানায়, লালমাটিয়ার সি-ব্লকে অবস্থিত একটি আকর্ষণীয় ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে। ফ্ল্যাটের মালিক তার পরিচিত। স্বর্ণা চাইলে মালিক আর অন্য কারও কাছে বিক্রি করবে না। কিন্তু তার হাতে টাকা নেই। প্রবাসী কামরুলের নামেই ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য স্বর্ণা এক কোটি টাকা চায়। পরে ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে তাকে কিছু লভ্যাংশ দিলেই হবে। ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য কয়েক দফায় বিভিন্ন মাধ্যমে মোট ৬৬ লাখ টাকা স্বর্ণাকে দেন ওই ব্যবসায়ী।

এজাহারে ওই ব্যবসায়ী উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ১৩ মার্চে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরলে রোমানা ইসলাম স্বর্ণা আমার টাকায় কেনা উবারে ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার ও ফ্ল্যাট দেখার জন্য লালমাটিয়ার বাসায় যেতে অনুরোধ করে। ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত গাড়িতে স্বর্ণার ফ্ল্যাটে যাই। সেখানে ফলমূলসহ নাস্তা খেতে দেওয়া হয়। সেসব খেয়ে মাথা ঝিমঝিম করে। বিছানায় নিয়ে স্বর্ণা আমাকে অর্ধউলঙ্গ করে নিজেও অর্ধনগ্ন হয়ে ছবি তুলে ব্লাকমেইল করে বিয়ের চাপ দেয়। না হলে ওই সব ছবি পাঠিয়ে ও ধর্ষণ মামলা দিয়ে মান-সম্মান নষ্ট করবে বলে হুমকি দেয়। ক্রমাগত হুমকি ও সম্মানের ভয়ে ওই বছরের ২০ মার্চ রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিধবা স্বর্ণাকে বিয়ে করেন কামরুল। দেনমোহর বাবদ নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৩৩ ভরি স্বর্ণ দিতে বাধ্য হন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে চার লাখ টাকা মূল্যের হাতঘড়ি, দেড় লাখ টাকার দুইটি আইফোন আদায় করেন স্বর্ণা। ৪ এপ্রিল সৌদি আরবে চলে যান কামরুল। ৪-৫ মাস পর দেশে ফিরে দেখা করতে চাইলে স্বর্ণা খারাপ আচরণ করতে থাকেন। আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ফ্ল্যাট এবং গাড়ি বুঝিয়ে দিতে বলেন। স্বর্ণা বাড়ি-গাড়ি বুঝিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ফেরত পেতে গত বছরের ৬ জানুয়ারি আদালতে মামলা করেন ওই ব্যবসায়ী। ওই মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা বাবদ নেওয়া সব টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অন্যায় আচরণ না করার শর্তে জামিন নেন স্বর্ণা। এরপর তিনি ভালো আচরণ করে আবার ১২ লাখ টাকা নিয়ে একটি টয়োটা গাড়ি কিনে নেন। এর মাঝে নগদ ১০ লক্ষাধিক টাকাসহ নানা কৌশলে হাতিয়ে নেন আরও স্বর্ণালঙ্কার। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বর্ণা আবার ওই প্রবাসীকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। ফোন দিলে গালিগালাজ করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে লালমাটিয়ার বাসায় গিয়ে স্বর্ণার সন্ধান না পেয়ে ওই প্রবাসী মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে স্ত্রী নিখোঁজ জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। রাত পৌনে ৩টায় স্বর্ণা বাসায় ফেরেন। পুলিশ তখন তার ফ্ল্যাটে গেলে স্বর্ণা দরজা না খুলে মোবাইলে জানায় কামরুলকে তালাক দিয়েছেন। মোবাইলে তালাকনামার কপিও পাঠান। পরে তেজগাঁও পুলিশের ডিসির কার্যালয়ে প্রতারণার বিস্তারিত তুলে ধরে ওই প্রবাসী ব্যবসায়ী বলেন, আমি তালাকের কপি যাচাইয়ের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) অফিসে আবেদন করলে আমাকে জানানো হয় তালাকনামাটি ভুয়া। নোটিশটিও জাল।

সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, স্বর্ণার পুরো পরিবার একটি প্রতারক। এরা প্রথমে ফুসলিয়ে পরে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন মালামাল হাতিয়ে নেয়। স্বর্ণা ও তার পরিবার যোগসাজশ করে আমার কষ্টার্জিত টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমাকে পথে বসিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com