সময়টা তখন ১৯৯৪ সাল। সে বছর হলিউডে মুক্তি পায় আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের শত মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমা ‘ট্রু লাইস’। চারদিকে শোরগোল পড়ে যায়। প্রথমবারের মতো একশ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে নির্মিত ছবিটি কেমন- তা নিয়েই বিশ্বব্যাপী সিনেমাপ্রেমীদের কৌতূহলের অন্ত ছিল না। সেই শুরু বড় বাজেটে ছবি নির্মাণের। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় দুনিয়া কাঁপানো সেই ছবি ‘টাইটানিক’। ছবিটির বাজেট প্রথমবারের মতো ছোঁয় ২০০ মিলিয়ন ডলারের ঘর। আমাদের দেশের মুদ্রায় প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা! ভাবা যায়! ‘ট্রু লাইস’ ও ‘টাইটানিক’ ছবি দুটির পরিচালকই ছিলেন জেমস ক্যামেরন। ২০০ মিলিয়ন খরচ করে অনেকের তির্যক সমালোচনায় পড়লেও মুক্তির পর ‘টাইটানিক’ বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। ছবিটি থেকে উঠে আসে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার। সেই সময় এই আয় ছিল সর্বকালের সেরা। পরবর্তী সময়ে অনেক ছবি আলোড়ন তুললেও এখনো সর্বাধিক আয়ের দিক থেকে টাইটানিকের অবস্থান তৃতীয়। এর পর থেকে অহরহ বড় বাজেটের ছবি নির্মিত হতে থাকে। এমনো হয়েছে, বড় বাজেট হলেও সিনেমাটি ফ্লপ করে, মুখ থুবড়ে পড়ে বক্স অফিসে। আবার এমনো হয়েছে, অনেক কম বাজেটের ছবিও সুপারডুপার হিট হয়েছে। এখন তো ২০০ মিলিয়নের ঘর ছাড়িয়ে ৩০০ মিলিয়ন, এমনকি প্রায় ৪০০ মিলিয়নের ঘরও ছুঁই ছুঁই ছবি নির্মাণ হচ্ছে।
হলিউডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩০০ মিলিয়নের বেশি বাজেটের বেশকিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমার রেকর্ড করে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : অন স্ট্রেঞ্জার টাইডস’। ছবিটি ২০১১ সালে মুক্তি পায়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩৭৯ মিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা। এক দুঃসাহসী জলদুস্যর কাহিনিনির্ভর ছবিটির প্রধান চরিত্রে ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা জনি ডেপ। ছবিটি ‘পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ান’ সিরিজের চতুর্থ কিস্তি। এর পর ৩৬৫, ৩৫৬ ও ৩২৫ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত হয়েছে যথাক্রমে অ্যাভেঞ্জারস সিরিজের তিনটি সিনেমা ‘এজ অব আলট্রন’ (২০১৫), ‘এন্ডগেম’ (২০১৯) ও ‘ইনফিনিটি ওয়ার্ল্ড’ (২০১৮)। মারভেল স্টুডিও থেকে এসব বিশাল বাজেটের ছবি মুক্তি পায়। ‘অ্যাভেঞ্জারস’ সিরিজটি নির্মিত হয়েছে মারভেল কমিকসের সুপারহিরো চরিত্রদের নিয়ে। এই সিরিজের প্রতিটি সিনেমা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও এর সব কিস্তিই বক্স অফিসে ধুমধাড়াক্কা ব্যবসা করে। এন্ডগেম তো বক্স অফিসে একের পর এক রেকর্ড করে। প্রায় ২.৮ বিলিয়ন ডলার আয় করে ছবিটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৩ হাজার ৮০ কোটি টাকার মতো। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবির রেকর্ড। সম্প্রতি ‘অ্যাভেঞ্জারস’ সিরিজের আরেকটি ছবি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে মারভেল স্টুডিও।
২০০৭ সালে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ সিরিজের তৃতীয় কিস্তি ‘এট ওয়ার্ল্ডস এন্ড’ প্রথমবারের মতো ৩০০ মিলিয়নের ঘর স্পর্শ করে। এটি মুক্তি পাওয়ার আগেই বিশ্বব্যাপী জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় এর বিশাল ব্যয় নিয়ে। সিরিজের আগের দুটি ছবির মতোই এটিও তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ‘এট ওয়ার্ল্ডস এন্ড’-এর পাশাপাশি ব্যয়বহুল সিনেমার তালিকায় যৌথভাবে পঞ্চমে আছে ২০১৭ সালে নির্মিত ‘জাসটিস লিগ’। লাইভ-অ্যাকশন ঘরানার এই পর্বটির ঘটনাপ্রবাহও এগিয়ে গেছে একঝাঁক সুপারহিরোকে ঘিরে। এর পর রয়েছে ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া অ্যালডেন এরেনরিস অভিনীত মার্কিন সিনেমা ‘সোলো : আ স্টার ওয়ার স্টোরি’। ছবিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার। অনেক বড় বাজেটের ছবি হওয়া সত্ত্বেও এটি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। একই পরিমাণ অর্থ খরচ করে নির্মিত আরেকটি ছবি হলো ‘স্টার ওয়ারস : দ্য রাইস অব স্কাইওয়াকার’। ২০১৯ সালে রিলিজ হওয়া ছবিটি সারাবিশ্বে তুমুল আগ্রহের সৃষ্টি করে। জে জে আব্রাহাম পরিচালিত সিনেমাটি প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার আয় করে; যা হলিউডের ইতিহাসে সেরা ব্যবসাসফল ছবির একটি। এর পরের অবস্থানে আছে ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া সায়েন্স ফিকশন অ্যাকশন ছবি ‘জন কারটার’। ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্সের ব্যানারে ছবিটি ২৬৪ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত হলেও মুক্তির পর উঠে আসে ২৮০ মিলিয়ন ডলার। খরচ উঠে এলেও ছবিটি তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। ব্যয়বহুল সিনেমার তালিকায় দশম অবস্থানে সুপারহিরো ব্যাটম্যান ও সুপারম্যানের দ্বন্দ্ব-বন্ধুত্ব নিয়ে নির্মিত ছবি ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান : ডওন অব জাস্টিস’। ছবিটি নির্মাণে খরচ করা হয় ২৬৩ মিলিয়ন ডলার। সিনেমাটিতে ব্যাটম্যান ও সুপারম্যান ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন ওয়ান্ডার ওম্যান চরিত্রের এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী গল গ্যাডট। এটি মোটামুটি জনপ্রিয়তা পায় এবং প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে।
এ ছাড়া ‘ট্যাঙ্গলেট’, ‘দ্য লায়ন কিং’, ‘স্পাইডারম্যান-থ্রি’, ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস-৭’, ‘আভাটার’, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ ব্ল্যাড প্রিন্স’, ‘স্টার ওয়ারস : দ্য লাস্ট জেডি’ সিনেমাগুলোর প্রতিটিই ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত। যেগুলো এখন পর্যন্ত হলিউডের ব্যয়বহুল সিনেমার তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছে।
Leave a Reply