দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) এক সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ সম্পর্কিত কল রেকর্ড এবং কল লিস্ট বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন) এবং গ্রামীণ ফোনকে (জিপি) দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। গতকাল রবিবার রিটকারীর পক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওই সহকারী পরিচালক (এডি) আলমগীর হোসেন ঢাকা সদরের সাবেক সাব রেজিস্ট্রার এবং বর্তমানে পিরোজপুরের জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত মো. আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগমের বিরুদ্ধে দুদকের করা একটি মামলার তদন্ত করছেন। কিন্তু ওই জেলা রেজিস্ট্রারের ভাইয়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে ঘুষ দাবি করছেন- এমন অভিযোগ তুলে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের দাবিতে রিট করেন আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার।
গতকাল আদেশে আগামী ১৪ মার্চ অথবা তার আগেই রিট আবেদনকারী জেলা-রেজিস্ট্রার মো. আবদুল কুদ্দুস হাওলাদারের ভাইয়ের মোবাইল নাম্বার ০১৭২১৬২২৭২০ এবং দুদকের ওই সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেনের মোবাইল নম্বর ০১৮১৯৩৩৫৭৩৯-এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কথোপকথনের রেকর্ড এবং কল লিস্ট আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এডি আলমগীর হোসেনকে এদিন ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালত আগামী ১৪ মার্চ এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবারের আদেশ অনুযায়ী এদিন রিটকারী পক্ষকে ওই ঘুষ দাবির অডিও-ভিডিও রেকর্ড দাখিল করার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল শুনানিতে অংশ নিয়ে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন আদালতে বলেন, আমরা ওই ঘুষ দাবির কথোপকথনের অডিও রেকর্ড চেয়ে বিটিআরসি ও জিপির কাছে পৃথক আবেদন করেছি। কিন্তু তারা বলেছে, আদালত যদি আদেশ দেন সে ক্ষেত্রে আমরা এ রেকর্ড দিতে পারব। অন্যথায় দেওয়া যাবে না।
এ সময় দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান আদালতে বলেন, তারা সরাসরি একজন তদন্ত কমকর্তা পরিবর্তনের দাবিতে রিট করেছেন। আসামি পক্ষ এ রিট করতে পারে না। এ কারণে গত তারিখ শুনানিকালে তারা বলেছিল ঘুষ দাবির অডিও ও ভিডিও রেকর্ড তাদের হাতে আছে। এ জন্য সেটি দাখিলের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখন তারা বিটিআরসি ও জিপির প্রতি আদেশ চাচ্ছে। এটা একটা অস্পষ্টতা দেখা দিল। দুদক একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এভাবে দুদকের একজন সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে সাবমিশন করলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যায়।
এসময় তিনি আরও বলেন, সেদিন এক রকম আজ আরেক রকম সাবমিশন করছে। আর যদি ঘুষ দাবির অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, তা হলে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আদালতও এ সময় বলেন, প্রমাণ করতে না পারলে ১০ কোটি টাকা দিতে হবে। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী বলেন, বিটিআরসি ও জিপির কাছ থেকে রেকর্ড আসার পর যদি দেখা যায় প্রমাণিত হয়নি, তখন পিটিশনার ক্ষতিপূরণ দেবে।
এ সময় দুদকের এডির পক্ষে আইনজীবী মো. আবদুর রশিদ শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, মামলার বিচার বিলম্বিত করার জন্য তারা এখানে রিট করেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা তার বউয়ের নামে কতশত বিঘা জমি কিনেছে। ৩৪টি দলিলে ৩০ একর জমি বউয়ের নামে করেছে। তার দাম কত দেখিয়েছেন? তিনি এডির ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি এবং আগামী সপ্তাহে এফিডেভিট দেওয়ার আবেদন জানান।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক আদালতে বলেন, যে প্রশ্ন উঠেছে, তাতে বিটিআরসি ও জিপিকে নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। কারণ তারা কোন ভুয়া আবেদন করে থাকে তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশ্নটির সুরাহা দরকার। কারণ দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, স্বতন্ত্র সংস্থা। প্রশ্নটি অমীমাংসিত রাখাটা ঠিক হবে না। পরে আদালত কল রেকর্ড তলব করে ওই আদেশ দেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য জানাতে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ জেলা রেজিস্ট্রার মো. আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগমকে নোটিশ পাঠায় দুদক। দুদকের (ঢাকা-১) উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পাঠানো নোটিশের উপযুক্ত জবাব না পেয়ে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর ওই দম্পতির বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে মামলা করে দুদক। মামলায় ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন, ৯০ লাখ ১২ হাজার ৭৯৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক দখল রাখার অভিযোগ আনা হয়।
এদিকে মামলা দায়েরের পর তদন্তে নামেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। তদন্তের সময়ে তিনি আসামিদের অনৈতিক লেনদেনের প্রস্তাব দিতে থাকেন। এ অবস্থায় ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর এবং চলতি বছরের গত ১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন চেয়ে দুদকের কাছে আবেদন জানান মামলায় অভিযুক্ত মো. আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগম। তাদের এ আবেদনে দুদক কোনো সাড়া না দেওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তারা।
Leave a Reply