বিশ্ব সৃষ্টিতে নারী আর পুরুষের সমান হস্তক্ষেপ আছে। তাই তো কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখছেন- ‘বিশ্বের যা কিছু মহান/সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী/অর্ধেক তার নর।’ এই সত্যকে বাস্তবে রূপ দিতেই প্রতিবছরের মতো বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে আজ ৮ মার্চ উদযাপন হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব/গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্বের সব নারীকে জানিয়েছেন আন্তরিক শুভেচ্ছা।
দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আলোচনাসভা, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং এসব বিষয়ে প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টিতে র্যালি, সমাবেশ ও আলোচনা অনুষ্ঠান হাতে নেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে সব আয়োজনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি টেলিভিশন ও বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দিবস ঘিরে সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুরু। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেপ্তার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারাবিশ্বে দিবসটি উদযাপন হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে উদযাপন শুরু করে। এর দুবছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতাকে সম্মাননা দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বিজয়ী জয়িতাদের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেবেন। প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হবে। থাকবে বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন।
‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে গতকাল বিকালে সিপিবির কেন্দ্রীয় নারীসেল আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। ‘নারীর প্রতি সহিংসতা ও শোষণ-বৈষম্য রুখো, সমাজতন্ত্রের লড়াই অগ্রসর করো’ শীর্ষক আয়োজনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘নারীকে দুটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়- এক হলো বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে, আরেকটি পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যখন গণতন্ত্র থাকে না সমাজে তখন শোষণ-নিপীড়ন বাড়তেই থাকে এবং এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীসমাজ। এ কারণেই আজকে বাংলাদেশে যে কোনো সময়ের চেয়ে নারী নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ ও শিশুহত্যা ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে নারী ও শিশুরা খুন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিও নানা আয়োজনে উদযাপন করবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি। নারীপক্ষের আয়োজন হবে ১২ মার্চ। ওইদিন সকাল ৯টায় চারুকলার সামনে জমায়েত হয়ে পদযাত্রা করবে সংগঠনটি। আজ কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্টের নেতৃত্বে ১৩টি স্বেচ্ছাসেবী ও নারী সংগঠনের উদ্যোগে প্রতীকী জননীর জন্য পদযাত্রা, আলোচনাসভা ও ফ্রি স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
Leave a Reply