যুক্তরাষ্ট্রে বহুল আলোচিত ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারী পাবলিক চার্জ রুল আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হচ্ছে। এই পাবলিক চার্জ কার্যকর করার জন্য ইউএসসিআইএস প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তাদের সাইটে তারা পাবলিক চার্জ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ও সতর্কবার্তা জারি করেছে। কী কী করলে পাবলিক চার্জ হবে আর কোন কোনটি পাবলিক চার্জ হবে না, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীরা যাতে আবেদন করার প্রস্তুতি নিতে পারেন, সেই সুবিধাকে মাথায় রেখেই করা হয়েছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য আসতে পারে। পরিবর্তন আসতে পারে কিছু ফরমে। সেখানেও পাবলিক চার্জ সংক্রান্ত বিষয়েও প্রশ্ন যুক্ত করা হতে পারে। আর সেগুলো করে ২২ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত নিয়ম প্রকাশ করবে ইউএসসিআইএস। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাবলিক চার্জের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে এখন আর এই পাবলিক চার্জ রুল কার্যকর করতে কোনো বাধা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ছাড়া আর সব স্টেটে এটা কার্যকর হবে প্রথমে ৪৯টি বলা হলেও এখন সবখানে হচ্ছে। পাবলিক চার্জের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একজন ব্যক্তির বয়স, স্বাস্থ্য, ইনকাম, শিক্ষা ও দক্ষতাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করবেন। তবে কেউ যদি সরকারের সুবিধাগুলো ইচ্ছে করে নেন ও রুল অমান্য করেন, তাহলে যেকোনো সময় পাবলিক চার্জ রুলের অধীনে পড়তে পারেন। এর অধীনে পড়লে ওই ব্যক্তির গ্রিন কার্ড আবেদন অগ্রহণযোগ্য হবে বা ডিনাই হবে। মিলবে না গ্রিন কার্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা পাবলিক চার্জ রুলে উল্লেখিত সুবিধাগুলো নেবেন, তাদের গ্রিন কার্ড পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে আরও বেশি কিছু নির্দেশনা আসবে, যার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
পাবলিক চার্জের রুল কার্যকর হবে কাদের ক্ষেত্রে, কারা এর আওতায় আর কারা নন, কী কী পাবলিক চার্জ হবে আর কোনটি হবে না, সেসব বিষয় বলা হয়েছে ইউএসসিআইএস থেকে। পাবলিক চার্জ কার্যকর হবে ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য আবেদন করবেন কিংবা এখানে আসার পর স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্ট করতে চান। তাদের আবেদনের সিদ্ধান্তের সময় ইমিগ্রেশন অফিসার পাবলিক চার্জের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। যাদের গ্রিন কার্ড রয়েছে, এর মধ্যে যারা সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করবেন, তারা পাবলিক চার্জের আওতায় পড়বেন না। পাবলিক চার্জের রুলের মধ্যে পড়ে এক পরিবারের কোনো একজন এমন সুবিধা নিলে বাকিরা এই রুলের আওতাধীন বলে বিবেচিত হবেন না। তবে কোনো পরিবার যদি সরকারের সুবিধা নেয়, তাহলে সেটা পাবলিক চার্জ হবে। সাপ্লিমেন্ট সিকিউরিটি ইনকাম (এসএসআই), অভাবগ্রস্ত পরিবারের জন্য অস্থায়ী সাহায্য হিসেবে নগদ অর্থ, নিডি ফ্যামিলিজের শিশুদের জন্য ভর্তুকির বিষয় পাবলিক চার্জের জন্য বিবেচনা করা হবে না। এছাড়া মেডিকেইডসহ দীর্ঘস্থায়ী পরিষেবার জন্য নার্সিং হোম, মেন্টাল হেলথ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি, চিকিৎসা ব্যয় গ্রহণকারীরা পাবলিক চার্জের আওতায় পড়বেন না। এছাড়া কেউ কারাগারে থাকলে ও সেখানে সুবিধা নিলে পাবলিক চার্জ হবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নগদ অর্থ সহায়তা নেওয়া যাবে, সেটাও পাবলিক চার্জ হবে না। তবে তা কী এটা বলা আছে। আরও বলা হয়েছে মেডিকেইড, অন্যান্য হেলথ ইন্স্যুরেন্স ও স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবলিক চার্জ নির্ধারণের বিবেচনায় আসবে না। চিলড্রেনস হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্রোগ্রাম (সিএইচআইপি) পাবলিক চার্জ নির্ধারণের বিবেচনায় আসবে না। ফুড স্টাম্প, দ্য স্পেশাল সাপ্লিমেন্ট নিউট্রিশন প্রোগ্রাম ফর ওমেন, ইনফ্যান্টস অ্যান্ড চিলড্রেন ন্যাশনাল স্কুল লাঞ্চ অ্যান্ড স্কুল, ব্রেকফাস্ট প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য সাপ্লিমেন্টারি ও জরুরি খাবার সাহায্য কর্মসূচি নিউট্রিশন প্রোগ্রাম, হাউজিং বেনিফিটস, চাইল্ড কেয়ার সার্ভিস, লো ইনকাম হোম এনার্জি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের মতো এনার্জি সাহায্য, জরুরি ত্রাণ সাহায্য, ফোস্টার কেয়ার অ্যান্ড এডপশন অ্যাসিস্ট্যান্স, হেড স্টার্ট অ্যাক্ট, এলিমেন্টারি, সেকেন্ডারি, উচ্চশিক্ষা, চাকরির জন্য প্রশিক্ষণসহ পাবলিক স্কুলে উপস্থিতির মতো শিক্ষা সাহায্য, স্যুপ কিচেন, ক্রাইসিস কাউন্সেলিং অ্যান্ড ইন্টারভেনশন ও স্বল্পকালীন আশ্রয়ের মতো সাহায্যাবলি পাবলিক চার্জ নির্ধারণে বিবেচনায় আনা হবে না।
এছাড়া রিফিউজি বা বাস্তুহারা, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদনকারী বাস্তুহারা ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, কিউবা অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তি, নিকারাগুয়া অ্যান্ড সেন্ট্রাল আমেরিকান রিলিফ অ্যাক্টের আওতায় অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি, হাইতিয়ান রিফিউজি ইমিগ্রেশন ফেয়ারনেস অ্যাক্টের অধীনে ছাড় পাওয়া ব্যক্তি, টি ভিসার আবেদনকারী, ইউ ভিসার আবেদনকারী, টি ভিসাধারী গ্রিন কার্ড লাভে প্রত্যাশী, টেম্পরারি প্রক্টেক্ট স্ট্যাটাসে আবেদনকারী এবং লাইফ অ্যাক্ট প্রভিশনের কিছু সংখ্যক দরখাস্তকারী পাবলিক চার্জের আওতায় পড়বেন না।
এর আগে সরকার থেকে আগস্ট মাসে পাবলিক চার্জ রুল জারি করা হয়। সেটা গত ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে ও আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে আটকে যায় পাবলিক চার্জ রুল। ফলে এটি আর তখন কার্যকর হয়নি। গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ আদালত এই রুল কার্যকর করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন। ফলে এখন এই রুল কার্যকর হবে। কেউ যদি এখানে বাস করেন, তিনি তার থাকার সময় বাড়াতে চান বা বাড়ান কিংবা অবস্থান চেঞ্জ করতে চান, স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্ট করতে চান কিংবা এখানে প্রথম আসতে চান তারা সরকারি সুবিধা নিলে পাবলিক চার্জের আওতায় পড়তে পারেন। কারা পড়বেন আর কারা পড়বেন না তাদের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।
পাবলিক চার্জের বিষয় নিয়ে ইউএসসিআইএস থেকে ইতোমধ্যে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বলা হয়েছে। ইউএসসিআইএস যে সতর্কবার্তা দিয়েছে, সেখানে পাবলিক চার্জের বিষয়টি কী এবং কেমন করে হবে সে বিষয়ে বলা আছে।
পাবলিক চার্জ অ্যালার্টে বলা হয়েছে, প্রথমে বলা হয়েছিল মার্কিন নাগরিকত্ব এবং ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) ইলিনয় বাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০-এ পাবলিক চার্জ গ্রাউন্ডসের চূড়ান্ত নিয়ম বাস্তবায়ন করবে। ইলিনয়তে এই নিয়মটি ৩০ জানুয়ারি ২০২০ অনুযায়ী একটি ফেডারেল আদালত দ্বারা নির্দেশিত থাকবে। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি আবার ইলিনয়কে সম্পৃক্ত করা হয়।
২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বা তার পরে পোস্টমার্কযুক্ত (বা অনলাইনে জমা দেওয়া) আবেদন প্রয়োগ করবে। এছাড়া বাণিজ্যিক কুরিয়ার দ্বারা প্রেরিত আবেদন এবং আবেদনের জন্য (যেমন ইউপিএস, ফেডেক্স এবং ডিএইচএল) পোস্টমার্কের তারিখটি কুরিয়ারের প্রতিবিম্বিত তারিখ প্রাপ্তি। ভবিষ্যতে যেকোনো সময় কোনো আবেদনকারীর পাবলিক চার্জে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না তা নির্ধারণের সময় ডিএইচএস ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০-এর আগে কোনো নগদ পাবলিক সুবিধার প্রাপ্তি বা অনুমোদনের জন্য কোনো বিদেশির আবেদন, সনদ বা অনুমোদনের বিষয়ে বিবেচনা করবে না। একইভাবে স্থিতিশীলতার স্থিতিশীলতা বা স্থিতিশীলতার পরিবর্তনের জন্য জনসাধারণের সুবিধার শর্ত প্রয়োগ বা আবেদনগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না তা নির্ধারণ করার সময়, ইউএসসিআইএস কেবল ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বা তার পরে প্রাপ্ত পাবলিক সুবিধাগুলো বিবেচনা করবে। ইউএসসিআইএস ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালের মধ্যে ইউএসসিআইএস ওয়েবসাইটে আপডেট হওয়া ফরম এবং জমা দেওয়ার নির্দেশাবলি পোস্ট করবে, যাতে আবেদনকারী এবং অন্যদের আপডেট পদ্ধতি পর্যালোচনা করার জন্য এবং ফাইলিংয়ের পদ্ধতিগুলো সামঞ্জস্য করতে সময় দিতে পারে। আরও তথ্যের জন্য নিয়মিত আপডেট দেখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আপাতত, ডিএইচএস ইলিনয়তে চূড়ান্ত বিধি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি ইলিনয়তে আদেশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়, ইউএসসিআইএস অতিরিক্ত জনসাধারণের গাইডেন্স প্রদান করবে।
এর আগে বলা হয়েছিল, আপাতত ডিএইচএস ইলিনয় বাদে চূড়ান্ত বিধি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি ইলিনয়তে আদেশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়, ইউএসসিআইএস অতিরিক্ত জনসাধারণের গাইডেন্স প্রদান করবে।
ইউএসসিআইএস থেকে পাবলিক চার্জের বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রশ্ন নিয়ে যাতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি না হয় কিংবা যে যার মতো করে ব্যাখ্যা না দেন, সে জন্য এবং পাবলিককে সঠিক তথ্য জানানোর জন্য তারা বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তরও তারা দিয়েছে।
Leave a Reply