স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ থেকে পাওয়া সুখবরটি জানাতে আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।
সুখবরটি আসতে যাচ্ছে বাঙালির দুটি বৃহৎ উৎসব উপলক্ষের মধ্যেই। দেশ এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। আর আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি পা দেবে ৫০ বছরে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে প্রস্তুত জাতি। এমন সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
১৯৭৫ সাল থেকে এলডিসির কাতারে রয়েছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে ইউএন-সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদ- পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টপলিসির (ইউএন-সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনাসভা গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় দফা পর্যালোচনা শেষে গতকাল গভীর রাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।
সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০২০ সালে ছিল ১ হাজার ৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে প্রয়োজন ৬৬ পয়েন্ট, বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫ দশমিক ৩।
অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬-এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২-এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতির জন্য সময় পেতে পারে।
করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে এই উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চেয়েছে। এখন চূড়ান্ত সুপারিশ পেলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে ২০২৬ সালে।
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চূড়ান্তভাবে উত্তররণ ঘটলে কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন সহজশর্তে ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। অবশ্য উত্তরণের প্রস্তুতিপর্বে এলডিসি হিসেবে প্রাপ্ত সব সুবিধা বহাল থাকবে। তা ছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে এলডিসি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে। ওই সময় স্বল্পোন্নত দেশ ছিল ২৫টি, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬-এ। এলডিসির তালিকা থেকে এ পর্যন্ত বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে।
Leave a Reply