পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার আগেই বাছাইয়ে আপত্তি ছিল শিক্ষার্থীদের। তাতে এবার সায় দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বজায় রেখেই গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। সে অনুযায়ীই পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেশের ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ছয়টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গেছে, গুচ্ছপদ্ধতিতে অংশ নেওয়া ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার যে নীতিমালা হয়, সে অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদনে কোনো ফি নেওয়া হবে না। পরে যাচাইয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিতরা ৫০০ টাকা আবেদন ফি জমা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ২৩ হাজার ১০৪টি। এখানে ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর বিজ্ঞান শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৭, বাণিজ্য শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৬.৫ এবং মানবিক শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ-৬ থাকতে হবে। শুধু এ বছরের জন্যই গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ ও ২০২০ সালে এইচএসসি পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারবেন।
পরবর্তী বছর থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ববর্তী বছরের পাসকৃত শিক্ষার্থীরা আর আবেদন করতে পারবেন না। তবে ভর্তির আবেদন গ্রহণের পর বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়ার বিরোধিতা করেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে তারা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং ইউজিসিকে স্মারকলিপি দিয়ে পরীক্ষার আগে বাছাই না করা এবং বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ২৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এ সময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সমুন্নত রেখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের আহ্বান জানান ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত যুক্তিসংগত বিষয়গুলো আমলে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট গুচ্ছের কমিটিকে তিনি আহ্বান জানান। সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার তাগিদ দিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারলে গুচ্ছভর্তিতে বিরাট সফলতা আসবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বিশালসংখ্যক মানুষ গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। ইউজিসি দেশবাসীকে সুন্দর একটি পরীক্ষা উপহার দিতে বদ্ধপরিকর।’
ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজা এ সময় বলেন, ‘গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুষ্ঠু ও প্রশ্নাতীতভাবে স্বচ্ছভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গুচ্ছের মূল দায়িত্বে থাকা উপাচার্যকে আহ্বান জানাই। সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসি সার্বিক সহযোগিতা করবে।’ ইউজিসি সদস্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন এবং সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এটি করা না গেলে জিপিএ-৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থী ছাড়া কেউ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।’
এ প্রসঙ্গে সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় গুচ্ছের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবেই চলছে। ইতোমধ্যে ৯টি কমিটিও গঠন করা
হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু করা এবং সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য তারা আন্তরিক।’
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৩ লাখ ২০ হাজার আসন রয়েছে। আর এবার এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি হলেও শিক্ষার্থীরা মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা খুবই কম। ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৬০ হাজার এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজে তিন হাজারের সামান্য বেশি। সে হিসাবে এই ৬৩ হাজার আসনেই হবে মূল লড়াই।
এদিকে ১৩ লাখ ২০ হাজার আসনের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি কলেজেই আসন প্রায় ৯ লাখ। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ৭০ হাজারেরও বেশি। তবে কলেজগুলোতে কোনো ধরনের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। শতভাগ কলেজ পাস শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে পড়েছেন জটিল সমীকরণে। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি নিশ্চয়তা নেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল এবং মেডিক্যাল কলেজে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর অনুষ্ঠিত হবে ভর্তি পরীক্ষা। কয়েক ধাপে গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা ছাড়াই বিশেষ বিবেচনায় শতভাগ শিক্ষার্থীই এবার উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। তাদের মূল্যায়ন করা হয় জেএসসি-এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে। সেই হিসাবে এবার উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার, তার নিচ থেকে জিপিএ ৪-এর মধ্যে পেয়েছেন চার লাখ ৯৯ হাজার ৭৪০ শিক্ষার্থী এবং জিপিএ-৩.৫ এর মধ্যে পেয়েছেন তিন লাখ ৪ হাজার ১৪৪ জন। তথ্য অনুসারে, ৯ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করবেন।
Leave a Reply