সরকারি কিংবা বেসরকারি যে কোনো শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থেকে কোনো শিশু নিখোঁজ হলে দায়ীদের সর্বোচ্চ ১০ বছর জেলের পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে খসড়া আইনে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতদিন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র নিয়ে দেশে কোনো আইনই ছিল না। নতুন আইনটি পাস হলে এসব প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ও শিশুদের যত্ন আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন, ২০২১’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১১৯টি এবং সমাজকল্যাণের অধীনে আছে ২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন আড়াই বছর ধরে ঘোরাঘুরি করছিল। গত তিন-চার মাসে একটু কেয়ার নিয়ে এটা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই আইন প্রবর্তনের পর সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজ ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত শ্রেণির কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার পাশাপাশি আইনের অধীন নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করতে পারবে।’
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে কীভাবে তা করতে হবে, আইনে তা বিস্তারিত বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘নির্ধারিত শিশু বা ক্ষেত্রমতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর প্রয়োজনীয় সেবা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বিনোদন, শিক্ষা ও শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে তিন মাসে একবার।’
তিনি বলেন, ‘এ আইন পাস হওয়ার পর অনুমোদন ছাড়া কেউ শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করতে পারবে না। করলে অপরাধ হবে। শিশুর জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন, কর্তব্যে অবহেলা, শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে রাখা হয়েছে দ- দেওয়ার বিধান। এর মাধ্যমে স্ট্রং মেসেজ সবাইকে দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনোরকমের কেয়ারলেস বা ইলিগ্যাল কোনো কাজ করা যাবে না।’
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র থেকে কোনো শিশু হারিয়ে গেলে ১০ বছরের জেলের পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। নতুন আইন পাস হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে চলমান শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোকে নিবন্ধন নিতে হবে। আর সব দিবাযত্ন কেন্দ্রই চলে আসবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তখন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনার জন্য সেই মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা করবে, যেখানে সব বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলে দেওয়া হবে।’
মরক্কোর সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি : বাংলাদেশ ও মরক্কোর মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বৈত করারোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধসংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুসমর্থনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বৈত করারোপ পরিহারে বিষয়টি নিয়ে আসা হয়েছে এ জন্য যে, দুই জায়গায় ট্যাক্স দিতে হতো।
চুক্তির ফলে দুই জায়গায় বা দুই দেশে ট্যাক্স দিতে হবে না।’ সচিব বলেন, ‘ব্যবসার মুনাফা, বিমান ও জাহাজে পণ্য পরিবহন, লভ্যাংশ, রয়েলিটি, মূলধনী মুনাফা, তথ্য বিনিময়, দ্বৈত করারোপ পরিহার- এসব বিষয় এ চুক্তির মধ্যে ছিল। যদি কোনো কোম্পানি দুই জায়গায় রেজিস্টার্ড থাকে, তবে চুক্তি অনুযায়ী এক জায়গায়ই ট্যাক্স দিতে হবে। এখন যেখাকেই ট্যাক্স দেওয়া হোক- রিপোর্টটি অন্য দেশের কাছে চলে যাবে।’
ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইন : মন্ত্রিসভায় ‘ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইন, ২০২১’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন মিলেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ সংক্রান্ত ১৯৯১ সালের একটি আইন ছিল। পরবর্তী সময়ে নতুন করে আইন করতে খসড়া নিয়ে আসা হয়। ব্যাংকের যেসব বই যেমন- লেজার বুক, ক্যাশ বুক এগুলোকে সাক্ষ্য বই বলা হয়। নতুন আইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যেসব রেকর্ড হবে, সেগুলোও সাক্ষ্য বই আইন বলে বিবেচিত হবে। ব্যাংকগুলোর লেজার বুক, ক্যাশ বুক, লোন ডিসপার্জ বুক যা আছে সবই অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।
Leave a Reply