নভেম্বরের নির্বাচনে ‘আগে আমেরিকা’র বদলে ‘সামনে আচ্ছা দিন’কে বেছে নিয়েছিলেন মার্কিন ভোটাররা। সেই ‘সুদিন’ শুরু হচ্ছে দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রবীণ ডেমোক্র্যাট নেতার শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে। বাইডেনের এ যাত্রা তাই নতুন আশা নিয়ে পুরো মার্কিন মুল্লুকেরই যাত্রা। সুদিন-পিয়াসী এ যাত্রার পানে নতুন আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্বও।
আজ বুধবার নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। এ উপলক্ষে রাজধানী ওয়াশিংটনে শপথ অনুষ্ঠানের সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। দেশটির স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ১০টা) শপথ অনুষ্ঠিত হবে। বাইডেনের পর ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস শপথ নেবেন।
গতকাল মঙ্গলবার ডেলওয়ার থেকে ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে আবেগঘন এক বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তার নতুন পথ ভঙ্গুর হলেও একে মোকাবিলা করে যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তিনি। পরে ওয়াশিংটন পৌঁছে লিংকন মেমোরিয়ালে করোনায় মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বাইডেন ও কমলা হ্যারিস।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে বিবিসি, সিএনএন, এএফপি ও রয়টার্স বলছে, শপথ অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ হামলা এড়াতে ওয়াশিংটনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হোয়াইট হাউজ থেকে শপথ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে বিভিন্ন গণমাধ্যম সরাসরি।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে মার্কিনিরা। রাজপথে সাধারণ মানুষের চলা ফেরাতেও অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। বাইডেনের শপথগ্রহণকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নাশকতার আশঙ্কায় জোরদার করা হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা হুমকির জেরে ক্যাপিটল হিলে জারি করা হয়েছে লকডাউন। তবে জো বাইডেনের শপথগ্রহণের পরও নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
আগামী কয়েকদিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সব ধরনের সভা সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। শপথের পর নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সপরিবারে হোয়াইট হাউজে উঠবেন। এদিন জাতির উদ্দেশে তিনি ভাষণ দেবেন। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় (বাংলাদেশ সময়) হোয়াইট হাউজ থেকে বাইডেন-হ্যারিসকে নিয়ে ভার্চুয়াল প্যারেড ও সম্প্রচার মাধ্যমগুলো সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
নভেম্বরের নির্বাচনে জয় নিশ্চিত বুঝেই বাইডেন বলেছিলেন, ‘আমেরিকার আত্মাকে ফেরাতে আমি এ নেতৃত্ব দিতে চেয়েছি। জাতির মেরুদণ্ড মধ্যবিত্তরা যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, এ জন্য আমি প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছি। আমি এ দায়িত্ব পেতে চেয়েছি যেন দেশের ভেতর নিজেদের মধ্যে ঐক্য ফেরাতে পারি, এবং একই সঙ্গে বিশ্বদরবারে আমেরিকাকে মহিমান্বিত করে তুলতে পারি।’
তার এ কথা থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্পের আমলে আমেরিকার আসল চরিত্র ঠিক ছিল না; দেশটি ছিল বিদ্বেষের বিষে আক্রান্ত এবং বহির্বিশ্বে তেজহীন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কতটা জনগণের হবে? এ প্রশ্ন রয়েই যায়। কারণ, এই বাইডেনই আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পুরো দুই মেয়াদে। তাদের দ্বিতীয় মেয়াদেই কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষত সিরিয়ায় উগ্রপন্থা ও জঙ্গিবাদের উত্থান ও চূড়ান্ত বিকাশ হয়েছিল; ওই সংকটের পেছনে তাদের নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি।
Leave a Reply