ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ৭টায় তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া সদরের গোপালপুর গ্রামে জানাজা শেষে গোপালপুর কবরস্থানে তার দাফন করা হয়। জানাজায় আনুশকার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী অংশ নেয়।
এদিকে, ওই স্কুলছাত্রীর দাফন শেষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। মেধাবী এই শিক্ষার্থীকে হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহানের কঠোর শাস্তিসহ এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে তদন্তপূর্বক তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা।
একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে এবং কেউ যাতে এমন অপরাধ করার সাহস না দেখায়, সে জন্য সব অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে ওই কিশোরীর বাবা মো. আল আমিন উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার সকালে আমার স্ত্রী ও আমি বের হয় হই। পরে আমার মেয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় তার মাকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিংয়ের পেপার্স আনতে বাইরে যাচ্ছে। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী দুপুর ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আমাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে।
পরে আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি দিহান আমার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। দিহান ফাঁকা বাসায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় তার শরীর দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে অচেতন হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ফারদিন ইফতেখার দিহান।
এদিকে, ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে কিশোরীটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ময়নাতদন্তের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে স্কুলছাত্রীটির মৃত্যু হয়েছে। ছাত্রীটি বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়েছে। মেয়েটিকে উত্তেজক বা নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না, তা রাসায়নিক পরীক্ষার নমুনা এবং সে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কি না, তা জানতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।’
Leave a Reply