খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২১ বরণ করে নিতে ডিসেম্বরের শেষ রাত বা থার্টি ফার্স্ট নাইটে নানা আয়োজন এ দেশেও প্রচলিত। কনসার্ট, পিকনিক, আতশবাজি ফুটানো, দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো- এগুলো বহু বছর ধরেই হয়ে আসছে। তবে এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অন্যান্যবারের মতো কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনে ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এর ফাঁক গলেও করোনার ‘বিষে নীল’ ২০২০ সালকে বিদায় এবং ‘মুক্ত বিশ্বের’ প্রত্যাশায় ২০২১ সালকে বরণ করে নিতে উদগ্রীব তারুণ্য দেখিয়েছে অভূতপূর্ব উন্মাদনা। আকাশ ছেয়ে ফেলা ফানুস আর মুহুর্মুহু আতশবাজির আলোকছটায় তারা যেন বিদায়ী বছরের অন্ধকারকে মুছে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। থার্টি ফার্স্ট নাইট তো বটেই, অন্য কোনো অনুষ্ঠানেও দীর্ঘ সময় ধরে বিরামহীন আতশবাজি আগে কখনো দেখা যায়নি। আর এত ফানুস ওড়ানো তো একেবারেই নতুন অনুষঙ্গ। গত বৃহস্পতিবার রাতে এমন অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন ঢাকাবাসী।
পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার অনেক আগে থেকেই শুরু হয় আতশবাজি ফুটানো। আর রাত ১২টা বাজতেই রাতের ঢাকা কেঁপে ওঠে মুর্হুমুহু আতশবাজির শব্দে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির ছাদ থেকে এসব আতশবাজি ফুটানো হয়। খ্রিষ্টীয় নতুন বছর বরণে ঢাকায় এমন ফানুস ও আতশবাজির ঝলকানি এর আগে দেখেনি কেউ।
২০২১ সাল বরণে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার বহিঃপ্রকাশের মধ্যেও নতুন বছরে মহামারী মুক্তির প্রার্থনাই বড় হয়ে ওঠে। ফেসবুক পোস্টে মহামারী থেকে মুক্তি পাওয়ার আশাবাদ জানিয়েছেন সবাই।
ঘড়ির কাঁটা বৃহস্পতিবার রাত ১২টার কাছাকাছি আসতেই শুরু হয় আতশবাজি ফাটানোর শব্দ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ তা বাড়তে থাকে। এদিন রাতে ঢাকার গুলশান, বনশ্রী, বারিধারা, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, মিরপুর এলাকা ঘুরে সব জায়গাই প্রায় একই চিত্র দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি আতশবাজি ফুটানো হয়েছে পুরান ঢাকায়। চকবাজারের বাসিন্দা রিয়াজউদ্দিন বাদল আমাদের সময়কে বলেন, থার্টি ফাস্ট নাইটে যেভাবে আতশবাজির উৎসব হয়েছে তা কখনো আমি দেখিনি। এটি নজিরবিহীন।
যদিও ডিএমপির পক্ষ থেকে আতশবাজি ফোটানোর বিরুদ্ধে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে তা শেষ পর্যন্ত কাগজেকলমেই থেকে যায়। প্রায় প্রতিটি ভবনের ছাদ থেকেই আতশবাজি ফাটাতে দেখা যায়। পাশাপাশি ফানুসও উড়ানো হয়। অনেক ভবনের ছাদে ছিল আলোকসজ্জাও। রাত ১২টার পর ঢাকার আকাশ ফানুসে ফানুসে ছেয়ে যায়। রাত ১২টা পেরিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক ভবনগুলোর ছাদে ছাদে চলে এমন নতুন বছর বরণ।
প্রতি বছর থার্টি ফার্স্ট রাতে টিএসসিতে সমবেত হন তরুণরা, নেচে-গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান তারা। তবে এবার মহামারীতে বাইরে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করায় ওই এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল পুলিশের। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় টিএসসিতে বরাবরের মতো সেই উৎসব না হলেও শহীদ মিনার এলাকায় সমবেত হয়েছিলেন বেশকিছু তরুণ।
রাতের ঢাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ব্যাপক তৎপরতাও চোখে পড়ে। তল্লাশি চৌকি পরিচালনার পাশাপাশি মাঝরাতে অলিগলিতে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। রাজধানীর অন্যতম পর্যটন স্পট হাতিরঝিলে প্রবেশ রাত ১০টা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে সবগুলো প্রবেশ/বাহির পথে পুলিশের ব্যারিকেড চোখে পড়ে। বিভিন্ন সড়কের প্রবেশ পথে পুলিশ-র্যাবের তল্লাশি চৌকির সঙ্গে টহল দিতে দেখা যায়। নগরজুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কূটনৈতিক এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকা ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী খোলা জায়গায় কোনো অনুষ্ঠান না হলেও বাসার ছাদ থেকে শুরু করে তারকামানের হোটেলগুলোতে ছিল ইংরেজি নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার নানা আয়োজন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন বছর বরণের রাতে সব ধরনের পটকা ফাটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞাটি উপেক্ষার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Leave a Reply