সাধারণত ‘পজিটিভ’ মানে ‘ইতিবাচক’ আর ‘নেগেটিভ’ মানে ‘নেতিবাচক’- এটাই মনে করা হতো। শব্দ দুটিকে সাধারণ মানুষও তাই মনে করত। কিন্তু বৈশ্বিক প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শব্দ দুটির অর্থ সাধারণ মানুষের কাছে পাল্টে দিয়েছে। এখন ‘পজিটিভ’ শব্দটি ভয় অথবা আতঙ্কের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নেগেটিভ মানে স্বস্তি মনে করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস দেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম দিনেই কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত দুজন পুরুষ ও একজন নারী শনাক্ত হন। ইতালি
ফেরত পুরুষ দুজনই পৃথক পরিবারের। একমাত্র নারী এদের একজনের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হন। বছরজুড়ে বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত ও ভয়ঙ্কর শব্দ ছিল করোনা ভাইরাস। তাই বছরজুড়ে সাধারণ সর্দি, জ্বর-কাশিও মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়। করোনা ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। অর্থাৎ তার জিনোম ডিএনএ নয়, আরএনএ দিয়ে তৈরি। কোনো মানুষের দেহে ভাইরাসটি আছে কিনা, তা শনাক্ত করতে সন্দেহজনক ব্যক্তির সর্দি বা কাশির থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। করোনা শনাক্তের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ও সংবেদনশীল পদ্ধতি আরটি-পিসিআর বা রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ পিসিআর। এ পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসামাত্রই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি। ঈদের আনন্দের মতোই সংশ্লিষ্ট পরিবার খুশিতে ভরে যায়। এ আনন্দের খবর আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের নানা মাধ্যমে জানানো হয়।
কিন্তু নমুনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসার সাথে সাথে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিটি স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের কাছেও অবহেলার পাত্রে পরিণত হতে হয়। পরিবারটিকে একঘরে করা ফেলা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হলে তা সমাধিস্থ অথবা কবর দেওয়ার মতো কোনো মানুষও পাওয়া যায়নি। সরকারি অথবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে নির্ধারিত স্থানে তা করা হতো।
সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছালে সরকারিভাবে দেশব্যাপী লকডাউনও করা হয়। ফলে সবকিছু স্থবির হয়ে যায়। করোনা ভাইরাসের কারণে বছরজুড়ে পজিটিভ-নেগেটিভ বেশ আলোচিত শব্দ ছিল। শুধু তাই নয়, হোম কোয়ারিন্টিন, সোশ্যাল ডিসটেন্স, পিপিই, লকডাউন, প্লাজমা, অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিজেন, কিট- এগুলো সাধারণ মানুষের কাছে এখন খুব পরিচিত শব্দ হয়ে গেছে। করোনার কারণে মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাকে পরিণত হয়েছে মাস্ক। কারোনাকালে লকডাউনের মধ্যে মানুষের মানবিক চেহারা দেখা গেছে; তেমনি ভয়ঙ্কর কর্মকা- ও দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে।
Leave a Reply