চাল নিয়ে চালবাজি থামছেই না। এর পেছনে রয়েছে আড়তদার আর মিল মালিদের কারসাজি। ক্রেতা-বিক্রেতা, বাজার বিশ্লেষক আর সরকারি মহল সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তাদের লাগাম টানার কেউ নেই। সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, প্রচলিত আইনে এসব অসাধু মিল মালিক বা আড়তদারদের ধরার সুযোগ নেই। তাদের কথাতেই ফুটে ওঠেছে অসহায়ত্ব। প্রশ্ন ওঠেছে, তাহলে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা কি পার পেয়েই যাবে? চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কি কিছুই করা নেই?
সরকারি হিসাব বলছে, এখনও ৫ লাখ ৫১ হাজার ২৯০ টন চাল মজুদ রয়েছে। গত বছর এই সময়ে মজুতের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে দশ লাখ টন।
তবে ঘাটতি পূরণে চলতি বছর বিদেশ থেকে ৫-৬ লাখ টন চাল আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম চালানের ৫০ হাজার টন চাল দেশেও পৌঁছেছে। আর জানুয়ারির মধ্যে আরও অন্তত দেড় লাখ লাখ টন চাল দেশে আসবে। সেই হিসাবে চালের ঘাটতি থাকার কথা না। খাদ্য সচিবের কথাতেও এমন আভাস পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, প্রত্যাশার চেয়ে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও ধান বা চালের কোন সংকট নেই। এরপরও গুদামজাত করে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে মজুতদাররা। বাড়াচ্ছে দাম। অন্যদিকে এই মজুতের কারণে আসছে মৌসুমে কৃষকদের ধানের দাম পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল।
এসব মজুতদারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় বা আসলেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা? এক্ষেত্রে সরকারের কি ভূমিকা থাকা উচিৎ? কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী এসব আড়তদার বা মিল মালিকদের বিরুদ্ধে খুব বেশি ব্যবস্থা নেয়া যায় না। আইনে যে ব্যবস্থা আছে তাতে ভয়ও পায় না। তারা মনে করে যে, আইনগতভাবে তাদের কিছুই করতে পারবে না সরকার। মন্ত্রী জানান, অনেকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার আবেদন করে, জরিমানা দিয়ে সংযোগ নেয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত যে আইন রয়েছে তাতে এসব মজুতদারদের কিছুই হবে না। তারা সতর্কও হবে না। তাদের জন্য প্রয়োজন আরও কঠোর আইন, প্রয়োজন আইনের পরিবর্তন। বর্তমান তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, বিদ্যমান আইনে তা অপরাধের মধ্যে পড়ে না।
বিদ্যমান মজুদ আইন অনুযায়ী, একটি রাইস মিল ১৫ দিনে যে পরিমাণ ধান থেকে চাল প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম, তার পাঁচগুণ ধান এবং দ্বিগুণ চাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ করতে পারবে। ছোট ছোট মিলের ক্ষেত্রে হয়তো এ আইন যথেষ্ট হতে পারে। তাদের পক্ষে বাজারে সংকট তৈরি করাও সম্ভব না। কিন্তু কিছু কিছু অটো-রাইস মিল বিশালাকার, এ কারণে আইন মেনেই তারা ব্যাপক পরিমাণ ধান ও চাল উদ্বৃত্ত রাখতে সক্ষম। বিশালাকার অটো রাইস মিলগুলো এতো বেশি উৎপাদন করে যে, হাতে গোনা কয়েকজন উৎপাদনকারী বাজারের একটি বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এই অবস্থায় তাদের দোষারোপের সুযোগ থাকে না, যদিও মূলত সংকটটা তারাই তৈরি করে।
এক্ষেত্রে বিদ্যমান মজুত আইন বাতিল অথবা সংস্কারই হতে পারে সংকটের সমাধান। দিন বদলেছে, এখন ভাববার সময় হয়েছে, একটা অটো রাইস মিল আকারে কত বড় হবে। তা না হলে পার পেয়েই যাবে আড়তদাররা। বরং বিদ্যমান আইন-ই তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।
Leave a Reply