উত্তর দিয়ে প্রবেশ করে মধ্যাঞ্চল হয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ ছড়িয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু জেলায়। জেঁকে বসা শীতে যেন ঠকঠক কাঁপুনি- সব মিলিয়ে নাকাল জনজীবন। আগামী ৪৮ ঘণ্টাও রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা। তবে আগামী বুধবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বেড়ে যেতে পারে কুয়াশাও। প্রকৃতি সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে না দিতেই মাসের শেষে ধেয়ে আসবে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ। এমন শঙ্কার কথাই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল রবিবার সকাল ৯টায় এ জেলার তেঁতুলিয়া ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তার আগের দিন রাজারহাটে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তার আগে টানা চার দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়াতেই।
আবহাওয়া অফিস বলছে- ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং ভোলা অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশের রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিতই থাকবে। এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বর্তমানে চলা মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আরও তিন থেকে চার দিন অব্যাহত থাকবে। এর পর শীত কমলেও মাসের শেষের দিকে আরেকটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নতুন বছরের শুরুতেও তীব্র শীত থাকার সম্ভাবনা।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। শুষ্ক থাকতে পারে আবহাওয়া। পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে আমাদের তেঁতুলিয়া প্রতিনিধি এসকে দোয়েল জানান, টানা ছয় দিন ধরে ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলায়। এতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। কনকনে শীত আর প্রবাহিত হিমেল হাওয়া। দিনভর গরম কাপড় পরে থাকলেও শরীর থেকে যেন নামছে না শীত। এতে করে হতদরিদ্র, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষগুলো শীতের প্রকোপে পোহাচ্ছে দুর্ভোগ। হাঁড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে খড়খুটো জ্বালিয়ে তা নিবারণের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে শীতবস্ত্র বঞ্চিত অসহায় মানুষদের।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ্ জানান, রবিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী থেকে রহিদুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার অবশ্য রাজারহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি প্রহলাদ ম-ল সৈকত জানান, শীত ও কনকনে ঠা-ায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। ফাঁকা হয়ে পড়ছে বাজার ও রাস্তাঘাট। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বলেন, ‘ঠা-া বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে আমার ইউনিয়নের হতদরিদ্র মানুষগুলো খুবই কষ্টে দিনযাপন করছে। সরকারিভাবে যে ৬৪০ পিস কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি, তা এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু চরাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের জন্য এই সংখ্যা অতিসামান্য। আমি বিত্তবানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন তারা এসব অসহায় মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।’
একই কথা জানান কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারিভাবে জেলার হতদরিদ্রদের মাঝে ৩৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ৯ উপজেলায় গরম কাপড় কিনে বিতরণের জন্য ছয় লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি চৌধুরী ভাস্কর হোম জানান, সারি সারি চা বাগান দিনভর থাকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা। শিশিরে ভেজা প্রাণবন্ত চায়ের কচি পাতা। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে শীতের তীব্রতা। সকালের ঘন কুয়াশাভেদ করেই শ্রমিকরা ছুটেন চা চয়নে। শ্রীমঙ্গলে বয়ে চলা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে এমন দৃশ্য পর্যটকদের জন্য মনোমুগ্ধকর হলেও নিম্নআয়ের ছিন্নমূল ও লক্ষাধিক চা শ্রমিকের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়া সহকারী আনিসুর রহমান জানান, গতকাল এ জনপদের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি শীত মৌসুমে শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতও বেড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে শীত আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply