1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

গর্ভেই মারা যাচ্ছে শিশু

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন ঝুঁকি দেখতে পেয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে নারীদের গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কমছে মাটির উর্বরতা, গ্রাম ছাড়ছেন অবস্থাপন্নরা। চট্টগ্রামের চকরিয়া উপজেলার ফাইলাপাড়া গ্রামের নারীরা তাদের গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও কেউই জানেন না কেন এমন হচ্ছে। মাটি ও পানিতে অতিরিক্ত লবণের উপস্থিতি এবং তার প্রভাবের বিষয়টি জানার পর অনেকেই অবাক হয়ে যান।

ফাইলাপাড়ার ৩২ বছর বয়সী সেনোয়ারা বেগমের আড়াই মাস বয়সী গর্ভের শিশু নষ্ট হয় এক বছর আগে। সাত মাস হলো তিনি পুনরায় গর্ভধারণ করেছেন। এখন পর্যন্ত গর্ভের বাচ্চা সুস্থ থাকলেও অজানা আশঙ্কা কাজ করছে বলে জানান তিনি। আবার দুই কন্যাসন্তানের মা রাজিয়া বেগমের গর্ভের বাচ্চা মারা গেছে সাতবার। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, স্বামী ক্যানসারের রোগী, এতবার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হওয়া এবং বারবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া কিছুই না।

একইভাবে চকরিয়ার মানিকপাড়া গ্রামের ২২ বছর বয়সী মায়মুনা জান্নাতের এ পর্যন্ত গর্ভের সন্তান মারা গেছে দুবার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি জানার পর তিনি বলেন, এ এলাকায় তাদের বসতভিটা। এটি ছেড়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো বিত্তবান তারা নন। তাই যত সমস্যাই থাকুক, এখানেই তাদের থাকতে হবে।

মানিকপাড়া গ্রামের সানোয়ারা বেগমের দুটি সন্তানের মধ্যে শেষটি গর্ভে মারা যায় ১১ বছর আগে। তিনি বলেন, অনেকেরই তো শুনি বাচ্চা পেটে মারা যাইতেসে, কিন্তু এর পিছে যে এই কারণ সেটা আন্দাজ করতে পারি নাই। আমরা ভাবসি, আল্লাহর হুকুম হইসে, বাচ্চা পেটেই মারা যাইতেসে।

ফাইলাপাড়া গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ নারীরই গর্ভের বাচ্চা মারা যায় ভ্রুণের বয়স ৬ মাস হওয়ার আগেই। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ইসমত জাহান খুকী এবং কাওসার জান্নাত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) চকরিয়া শাখায় মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তারা জানান, গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে গ্রামের নারীদের প্রতিনিয়ত সচেতন করে আসছেন।

ফাইলাপাড়া, মানিকপাড়াসহ চকরিয়া উপজেলার অন্যান্য গ্রামের বিভিন্ন শুকনো জায়গাতেও সাদা প্রলেপ দেখতে পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন গ্রামবাসী বলেন, এগুলো লবণের ভাব। কোথাও পানি উঠলে তা নেমে যাওয়ার পর এ রকম সাদা হয়ে থাকে। চকরিয়ার নিকটবর্তী একাধিক গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এখানকার পুরুষদের অধিকাংশই লবণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শুকনো মৌসুমে তারা লবণ সংগ্রহ ও বিক্রি করেন। প্রতি মণ অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হয় ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে। যারা লবণের ব্যবসা করেন না, তারা শহরে গিয়ে অন্য কিছু করেন।

উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নেওয়া প্রকল্পে কাজ করছেন আইসিডিডিআর’বির বিজ্ঞানী ড. মানজুর হানিফি। তিনি বলেন, সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ দিনে ৫ গ্রাম লবণ খেলেও এখানকার মানুষেরা খায় ১৬ গ্রাম। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা থেকে যারা ২০ কিলোমিটার দূরে থাকেন, তাদের চেয়ে এখানে গর্ভের বাচ্চা মারা যাওয়ার হার দেড়গুণ বেশি। যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দক্ষিণাঞ্চল তথা খুলনা, সুন্দরবনেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এখানকার মাটি এবং পানিতে অতিরিক্ত লবণের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ২৫-৩০ বছর আগেও এখানকার জমিগুলো অনেক উর্বর ছিল। কিন্তু এখন আর তেমন কোনো ফসল না ফলায় অনেকেই কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছেন। সামগ্রিক বিষয়ে তিনি সরকারের সুদৃষ্টি আশা করেন। খবর ডয়চেভেলের।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com