বগুড়ার শিবগঞ্জে এক গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার মামলা না নিয়ে উল্টো যৌনকর্মী হিসেবে আদালতে চালান দেওয়ায় থানার ওসি এবং এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর মা। গতকাল রবিবার বিকালে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি নথিভুক্ত হয়। বিচারক সেটি আমলে নিয়ে একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সিহালী ফকিরপাড়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে কলেজছাত্র রামিম হাসান রিমনের সঙ্গে বাদীর মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রিমনের পরিবার রাজি না থাকায় বাদী তার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেন। এক বছর হলো তিনি পাশের গ্রামে স্বামীর বাড়িতেই থাকেন। কিন্তু বিয়ের পরও রিমন সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে ফোনে সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। তাকে প্রভাবিত করতে নানা রকমের কুপ্রস্তাব দেয়।
এদিকে স্বামী না থাকার সুযোগে গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে বাড়িতে ঢুকে রিমন গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় পিরব ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবুল কাশেম ওই বাড়িতে গিয়ে দুজনকেই আটক করে পুলিশকে খবর দেন। পরে শিবগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ও এসআই রতন কুমার রায় তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যান। তবে ঘটনার শিকার গৃহবধূ এবং তার মা অভিযুক্ত রিমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা নেয়নি। উল্টো অভিযুক্তের সঙ্গে ওই গৃহবধূকেও দ-বিধির ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে (পতিতাবৃত্তি) আদালতে চালান দেওয়া হয়। আদালত অবশ্য পরে দুজনকেই জামিনে ছেড়ে দেন।
বাদীর অভিযোগ, শিবগঞ্জ থানার এসআই রতন কুমার রায় ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও ধর্ষণচেষ্টার মামলা না নিয়ে তার মেয়েকে যৌনকর্মী হিসেবে চালান দেন। এতে তাদের সম্মান নষ্ট করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা রতন। এ কারণে মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। বাদী আরও অভিযোগ করেন, তার মেয়ে গ্রামের একজন সাধারণ গৃহবধূ। তাকে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে থানায় আটক রেখে নির্যাতনও করা হয়। অভিযুক্ত রিমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা দায়েরের কথা বললে থানার এসআই রতন কুমার রায় তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে হাজতে ঢুকিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন।
ওসি এসএম বদিউজ্জামান জানান, তার বিরুদ্ধে একটি মহল মিথ্যা অভিযোগ করছে। যে নারী মামলা করেছে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। স্থানীয়রাই তাকে ধরে থানায় দিয়েছিল। এসআই রতন কুমার বলেন, ‘আমি যা করেছি তা আইনগতভাবেই করেছি। অভিযুক্ত মেয়ে যে খারাপ তার স্বীকারোক্তি স্থানীয় লোকজন আমার কাছে দিয়েছে।’
শিবগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় জেলার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে মেয়েটি পতিতাবৃত্তি করে না। স্বামীর বাড়িতেই থাকে।
Leave a Reply