ভোলার মেঘনায় মিলছে না ইলিশ। সারাদিন জাল বেয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। এতে অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে তাদের। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
জেলেরা জানান, প্রতি বছরেই অভিযানের পর নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরতো। কিন্তু এ বছর ভরা মৌসুমে ইলিশ ধরা পরেনি। তারপর আবার অভিযানের পরেও একই অবস্থা। এতে দুর্দিন চলছে জেলেদের।
এদিকে, মাছ না পাওয়ায় ইলিশের ঘাটগুলোতেও কোলাহল কমে গেছে। জেলে, পাইকার ও আড়ৎদারদের হাক-ডাকে যেসব ঘাট মুখরিত থাকতো, সেসব ঘাটগুলো এখন অনকেটাই নিস্তব্ধ। ইলিশ না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় জেলেরা।
জেলে বশির মাঝি বলেন, ‘ভাবছিলাম অভিযানের পর মাছ পাবো, কিন্তু নদীতে মাছ নেই। সারাদিন জাল বেয়ে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। গত এক সপ্তাহে জাল বেয়ে মাত্র ৪ হাজার টাকার মাছ পেয়েছি। মাছ না থাকায় অভাব-অনাটনের মধ্যে আছি।’
মেঘনায় ইলিশ না পাওয়া নিয়ে বশির মাঝির মতো একই কথা বলেন জেলে হারুন মাঝি। তিনি বলেন,‘নদীতে মাছ নেই। তাই নদীতে মাছ শিকার করতে যাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। গত দুই দিন নদীতে গিয়ে ৮০০-১০০০ টাকার মাছ পেয়েছি। গত কয়েকদিনে অনেক দেনা হয়ে গেছে। এমন হলে কিভাবে আমাদের দিন কাটবে?’
নদীতে ইলিশ সংকট নিয়ে এমন সমস্যা শুধু বশির ও হারুন মাঝির নয়, এমন সমস্যা এখন বেশির ভাগ জেলের। ভোলা সদরের তুলাতলী এলাকার কাসেম মাঝি বলেন,‘নদীত মাছ খুবই কম, তেল খরচও উঠে না। মাছ পাওয়ার আশায় মঙ্গলবার ৫ জেলে নিয়ে নদীতে গিয়ে পেয়েছি মাত্র ৭০০ টাকার মাছ, এতে আমাদের পুশছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাবে দিন কাটছে।‘
ইলিশা বিশ্বরোড এলাকার মৎস্য আড়ৎদার মো. সামসুদ্দিন জানান, ‘গত এমন দিনে আমাদের এখানকার আড়ৎগুলোতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার মাছের কেনা-বেচা হতো, কিন্তু এখন হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকার। এতে আমাদের মতো জেলেরাও লোকসানের মুখে পড়েছেন।‘
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার জেলেদের আহরিত মাছ স্থানীয় আড়তে বিক্রি হয়। সেখান থেকে ঢাকা, বরিশাল ও চাঁদপুরের পাইকারী বাজারে চলে যায়। কিন্তু ইলিশ সংকটের কারনে লোকসানের মুখে মৎস্যজীবীরা। স্থানীয় বাজারেও ইলিশ মিলছে না।
এ ব্যাপারে ভোলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে সাধারণত তেমন মাছ ধরা পড়ে না, তবে জানুয়ারি থেকে মাছ ধরা পড়বে বলে আমরা মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমাদের ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। জানুয়ারি থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার পড়লে আশা করি। তখন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’
Leave a Reply