1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন

বিদেশি ছবি আনলেই কি সিনেমা হল বাঁচবে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০

ভারতের সঙ্গে একই দিনে বাংলাদেশে মুক্তি পাবে বলিউডের হিন্দি ছবি। সাফটা চুক্তিকে ‘আপগ্রেড’ করে এমন সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছেন বাংলাদেশের হল মালিকরা। অস্তিত্ব সংকটে থাকা দেশের সিনেমা হলের মালিকরা হিন্দি সিনেমা আমদানি করে চালাতে একমত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গ্রিন সিগন্যালও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের দেশে অনেকগুলো হল বন্ধ। দর্শক আসছে না হলে। সারাদেশের হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কনটেন্ট সংকট, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সারাদেশের হল মালিকরা একমত হয়েছি, আমরা ভারতের ছবি নিয়ে আসব। এর আগে মামলা-মোকদ্দমা করে পুরনো হিন্দি সিনেমা নিয়ে এসেছি। কিন্তু পুরনো কোনো সিনেমা আমরা আর আনতে চাই না। আমরা চাই, বলিউড ও কলকাতার সিনেমা সেখানে যেদিন মুক্তি পাবে, আমাদের এখানেও একই দিন মুক্তি পাবে। এ পরিকল্পনার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ হল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, পুরনো হিন্দি ছবি এনে হলে দর্শক আনা সম্ভব নয়। খুব বেশি হলে মাসখানেক আগে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবি আনতে হবে। হল বাঁচাতে ভালো সিনেমার বিকল্প নেই। বিশ্বের অন্যতম সিনেমা হল সিনেওয়ার্ল্ড বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভারতীয় ছবি এনে আমরা পরীক্ষামূলক দেখতে পারি হল বাঁচাতে পারি কিনা। এই যে সিনেমা অনেকগুলো বানিয়ে রাখা হয়েছে, বানানো হচ্ছে। যদি বড় সিনেমা হলগুলো কলাপস করে, তা হলে এসব সিনেমা কোথায় দেখাবেন তারা। বলাকা খুলছে না, শ্যামলী খুলছে না। হিন্দি ছবি দিয়ে এখন আমাদের হল বাঁচানো ছাড়া উপায় কী?

হিন্দি ছবি মুক্তির প্রসঙ্গে প্রযোজকদের নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, বাইরের ছবির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আমরা মনে করি যে আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি মরে যাচ্ছে, এই ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য যদি সরকার আমাদের সিনেমা আমদানির অনুমতি দেয় তা হলে আমরা আছি। যদি বলা হয় ভারতে মুক্তির তিন মাস পর আমাদের দেশে আমদানি করতে হবে, তা হলে আমি বলব আমাদের দেশীয় টাকাটা অপচয় হবে। আমরা চাই সমসাময়িক মুক্তি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ। তিনি বলেন, মোট কথা বাইরের ছবি না আনলে চলচ্চিত্র বাঁচবে না। কারণ লোকাল প্রডাক্ট নেই। যখন লোকাল প্রডাক্ট ছিল, তখন কিন্তু আমরা সিনেমা হল মালিকরা বাইরের ছবি আনার কথা বলিনি। এখন প্রযুক্তির অনেক উন্নতর দিকে চলে আসছি। এখন মোবাইলে পৃথিবীর সব ছবি দেখা যায়। সেই ছবি সিনেমা হলে দেখতে দেবেন না, এটা অন্যায়। এটা যে শুধু ব্যবসায়িক সংকট সৃষ্টি করে তা-ই নয়, এটা সাধারণ দর্শকের ক্ষেত্রেও একটা ডিসপিরিটি। যে ছবি আমি ঘরে বসে টেলিভিশনে দেখতে পারব, সেটা আমি সিনেমা হলে দেখতে পারব না, এটা একজন নাগরিক হিসেবে আমার মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ছবি আনুক তাতে অসুবিধা কী? সেই ছবি চালানোর মতো হল আছে কি? এসব ছবি চালাবে তো সিনেপ্লেক্সগুলো। বেশিরভাগ হলের তো মেশিনই নেই চালানোর। আর এটা প্রযোজকদের ব্যাপার। প্রযোজক-পরিবেশকদের ব্যাপার। দর্শক আসে কিনা সেটা আগে দেখুন।

শীর্ষ নায়ক শাকিব খান বলেন, হিন্দি ছবি মুক্তি পাওয়ায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলা চলচ্চিত্র। দেড়শ কোটি রুপি বাজেটের হিন্দি ছবি বাংলাদেশের টাকায় প্রায় পৌনে ২০০ কোটির মতো। সেই ছবির সঙ্গে আমার দেশের কম বাজেটের ছবি কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারবে না। অসম প্রতিযোগিতা কোনোদিন হতে পারে না। প্রতিযোগিতা হবে সমানে-সমানে। উপমহাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে কিন্তু অনেক সাদৃশ রয়েছে। সাংস্কৃতিক মিল থাকলেও হিন্দি ছবির বাজেট অনেক বেশি। আমরা এর ধারে কাছেও নেই। হিন্দি ছবির প্রভাবে শ্রীলংকার চলচ্চিত্র মার্কেট হারিয়ে গেছে। নেপালের সিনেমা ধ্বংস হয়ে গেছে। হিন্দি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হলে আমাদের ক্ষতিটা তো ওইভাবেই হবে।

হল বাঁচাতে হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা আগেই বলেছেন, সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে ‘মানসম্পন্ন ডিজিটাল চলচ্চিত্র’ নির্মাণের পাশাপাশি বিদেশি চলচ্চিত্র আমদানির ব্যাপারে সরকারের সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। আগেও বেশ কয়েকবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুরনো হিন্দি সিনেমা মুক্তিও পেয়েছে। তবে চলচ্চিত্রের নানা সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মুখে সেটি খুব একটা সফল হতে পারেনি। সাফটা চুক্তির আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময়ের সুযোগ থাকলেও সিনেমা হলে হিন্দি ছবির প্রদর্শন হয় ২০১৫ সালে। দেশে আনা হয় সালমান খানের ‘ওয়ান্টেড’। ছবিটি মুক্তির প্রতিবাদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের ব্যানারে তখন শুরু হয়েছিল ধর্মঘট আর বিক্ষোভ। মামুনুর রশীদ বলেন, ‘হিন্দি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র যদি আমাদের দেশে এভাবে অবাধে চলতে থাকে, তা হলে তা শুধু আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির জন্য নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের সংস্কৃতিকে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, দেশের প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি সিনেমা মুক্তির ব্যাপারটি দেশীয় চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা। হিন্দি সিনেমার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতো অবস্থানে এখনো পৌঁছায়নি বাংলা চলচ্চিত্র। সিনিয়র অভিনেতা ওমর সানী বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রের বাজেট এবং ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাজেটের পার্থক্য অনেক। এ প্রেক্ষাপটে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমাদের দেশের প্রেক্ষাগৃহে চলতে পারে না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com