প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু। ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি পরিচালনা করেন আব্দুল জব্বার খান। মোট আয়ের হিসাবে ১০ কোটির ক্লাব অতিক্রম করতে পেরেছে মাত্র তিনটি ছবি। আমাদের আজকের আয়োজন ঢালিউডের ব্যবসাসফল ১০টি চলচ্চিত্র নিয়ে। লিখেছেন- ফয়সাল আহমেদ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি। ২০ লাখ টাকা বাজেটের এ ছবি আয় করেছিল ২৫ কোটি টাকা। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি পরিচালনা করেছেন তোজাম্মেল হক বকুল। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, অঞ্জু ঘোষ, মিঠুন, ফারজানা ববি, নাসির খান, সাইফুদ্দিন, প্রবীর মিত্র, শওকত আকবর, রওশন জামিল, দিলদার প্রমুখ। ছবিটি প্রযোজনা করে আনন্দমেলা কথাচিত্র।
‘বেদের মেয়ে জোসনা’র সাফল্য ছুঁতে না পারলেও রোমান্টিক চিত্রনায়ক সালমান শাহ নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত উপহার দেন অনেক হিট ছবি। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ আয় করে ১৯ কোটি টাকা। এমএ খালেক পরিচালিত এ ছবিতে আরও অভিনয় করেন শাবনূর, সোনিয়া, রাজীব, প্রবীর মিত্র, আবুল হায়াত, দিলদার, ডলি জহুর প্রমুখ।
সেরা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের তৃতীয় অবস্থানটিও সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্রের। ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছটকু আহমেদের ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ আয় করে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ছবিটিতে সালমান ছাড়াও অভিনয় করেন শাহনাজ, আলমগীর, শাবানা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, রাজীব, মিশা সওদাগর, তুষার খানসহ অনেকে। এর পর ঢালিউডের আর কোনো ছবিই ১০ কোটি টাকার বেশি আয় করতে পারেনি।
সেরা দশের চতুর্থ অবস্থানে আছে সালমান শাহ ও মৌসুমী অভিনীত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত এই ছবিটি আয় করে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। আমির খান-জুহি চাওলা জুটির সুপারহিট হিন্দি ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর অফিসিয়াল পুনর্র্নিমাণ ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এটি দিয়েই রূপালী অভিষেক হয় সালমান ও মৌসুমীর। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেন রাজিব, আবুল হায়াত, আহমেদ শরীফ, খালেদা আক্তার কল্পনা প্রমুখ।
৮ কোটি টাকা আয় করে এই তালিকার পঞ্চম অবস্থানে ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া গিয়াস উদিন সেলিমের ‘মনপুরা’। এই ছবিতে সোনাই আর পরি চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে চঞ্চল চৌধুরী ও ফারহানা মিলি জায়গা করে নেন ভক্তদের হৃদয়ে। ছবির ‘নিথুয়া পাথারে’, ‘যাও পাখি বল তারে’ গানগুলো শোনা যায় সবার মুখে মুখে।
১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’ ৭ কোটি টাকা আয় করে আছে ষষ্ঠ অবস্থানে। জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’ অবলম্বনে এ ছবির কাহিনি লিখেছেন আবদুল্লাহ জহির বাবু এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবর। ছবিতে নাম ভূমিকায় দেখা যায় ওমর সানীকে। বিভিন্ন চরিত্রে আরও ছিলেন পপি, আমিন খান, সঙ্গীতা ও হুমায়ুন ফরীদি।
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এস কে মুভিজ প্রযোজিত ‘বাদশা- দ্য ডন’ ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় করে আছে তালিকার সপ্তম স্থানে। ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন কলকাতার জিৎ ও বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া। আরও ছিলেন ফেরদৌস, রজতাভ দত্ত, পূজা চেরি, শ্রদ্ধা দাস প্রমুখ।
একই বছর মুক্তি পাওয়া জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এস কে মুভিজের আরেক ছবি ‘শিকারি’ ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আয় করে অষ্টম স্থানে রয়েছে। জাকির হোসেন সীমান্ত ও জয়দীপ মুখার্জি পরিচালিত এ ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন শাকিব খান ও শ্রাবন্তী। বিভিন্ন চরিত্রে আরও ছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, অমিত হাসান, খরাজ মুখোপাধ্যায়, সুপ্রিয় দত্ত, রাহুল দেবসহ অনেকে।
অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’ আয়ের দিক থেকে আছে নবম স্থানে। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি আয় করে ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। মুক্তির পর বাংলাদেশের দর্শকরা এটি দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। দেশের বাইরে থাকা বাঙালিদের মধ্যেও এই ছবিটি দারুণ সাড়া ফেলে। এতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী ও মাসুমা রহমান নাবিলা। বিভিন্ন চরিত্রে আরও দেখা গেছে পার্থ বড়ুয়া, লুৎফর রহমান জর্জ, বাদশা, বৃন্দাবন দাশ, জামিল হোসেন, গাউসুল আলম শাওন, ইফফাত তৃষাসহ অনেককে।
সেরা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের ১০ নম্বরে আছে বদিউল আলম খোকনের ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’। এটি আয় করে ৫ কোটি টাকা। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, সাহারা, মিশা সওদাগর, প্রবীর মিত্র, আফজাল শরীফ, রেহানা জলি প্রমুখ।
Leave a Reply