মার্কিন নির্বাচনে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত পেনসিলভানিয়ায় প্রায় ২২ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। এ ছাড়া জর্জিয়া, নেভাদা ও অ্যারিজোনায় এগিয়ে রয়েছেন এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। এসব অঙ্গরাজ্যে জিততে পারলে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে আর কোনো বাধা থাকবে না।
আজ শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, পেনসিলভানিয়াতে রিপাবলিকানরা পরে আসা ভোট গণনা নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। কিন্তু পেনসিলভানিয়ে ভোট গণনা থেমে নেই। শুরুতে এই অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু সেখানে ডাকযোগে আসা ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর ব্যবধান কমেছে বাইডেনের। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
কিন্তু এ ভোট ব্যবধানের নির্বাচনের বিজয়ী নিয়ে এখনই পূর্বাভাস দিচ্ছে না মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো। পেনসিলভানিয়ায় ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। সেখানে ট্রাম্পের ভোটসংখ্যা ৩৩ লাখ ৭ হাজার ৪৫৯ আর বাইডেনের ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩৩।
অঙ্গরাজ্যটিতে নির্বাচনের দিন ৩ নভেম্বরের পর পড়া সব ভোট গণনা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখানে বলা প্রয়োজন যে একসময় অঙ্গরাজ্যটিতে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ডাকযোগে আসা ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর বাইডেন তার সঙ্গে ব্যবধান কমাতে থাকেন। সে সময় থেকেই তিনি এ দাবি করে আসছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনের পরের দিন আসা ব্যালট আলাদা করতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক। পেনসিলভানিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেট ক্যাথি বুকভারকে নির্দেশ মানতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক স্যামুয়েল আলিতো।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের পরের দিন আসা সব ব্যালট আলাদা করার নির্দেশ দেন স্যামুয়েল। গণনা করা হলে সেগুলো যেন আলাদাভাবে গণনা করা হয়। এর আগেই পেনসিলভানিয়ার স্টেট অব সেক্রেটারি এমন নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এদিকে জর্জিয়ায় ভোট পুনর্গণনার ইঙ্গিত দিয়েছেন সেখানকার সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপার্গের। স্থানীয় সময় শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যালয় ও দেশের নির্বাচন কর্মকর্তাদের নজর হচ্ছে প্রতিটি বৈধ ভোট গণনা করা এবং ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা।’
১৬ ইলেক্টোরাল ভোটের এ অঙ্গরাজ্যটিতে ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা হয়ে গেছে। এখানে কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। এখানে দুজনের ভোটের ব্যবধান মাত্র দশমিক ১ শতাংশ। বাইডেন পেয়েছেন ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৫ ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছেন ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৮২৫ ভোট।
এদিকে নেভাদায় ট্রাম্পের সঙ্গে আরও ব্যবধান বাড়ছে বাইডেনের। সিএনএনের তথ্য অনুযায়ী, নেভাদায় আর ১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ ভোট গণনা বাকি। এর মধ্যে ৫৮ হাজার ডাকযোগে আসা ব্যালট আর ৬৬ হাজার ৫০০ নিবন্ধিত ভোটার। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ভোটার ক্লার্ক কাউন্টির। নেভাদায় ট্রাম্পের চেয়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন।
বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন অ্যারিজোনাতেও। সেখানে ট্রাম্পের চেয়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়ার মতো কোনো একটিতে জিতলে বাইডেন ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজের ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে যাবেন। অ্যারিজোনা আর নেভাদায় তো তিনি এগিয়েই আছেন। তবে নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে মিশিগান। এ অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার অঙ্গরাজ্যটির নির্বাচন ও এর ভোট গণনা পদ্ধতি নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। অঙ্গরাজ্যটির রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার লি চ্যাটফিল্ড বলেছেন, আইনসভার পর্যবেক্ষক কমিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার এই তদন্ত শুরুর বিষয়ে বৈঠক করবে।
এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা পেনসিলভানিয়াকে ঘিরে। ব্যাটলগ্রাউন্ড ছয় অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেনসিলভানিয়ায়। এ জন্যই লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে এখানে জিততেই হবে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। হারলেই হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিতে হবে তাকে।
ফক্স নিউজসহ একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, বাইডেন ২৬৪টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হতে হলে মোট ৫৩৮ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে তার প্রয়োজন ২৭০টি। এখন জয়-পরাজয়ের হিসাব ঝুলে আছে ছয় অঙ্গরাজ্যের ৭১টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের ফলাফলের ওপর। এর মধ্যে পেনসিলভানিয়া ২০টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫টি, অ্যারিজোনায় ১১টি, নেভাদায় ৬টি ও আলাস্কায় ৩টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে।
মার্কিন নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে ভোট পড়েছে তা দেশটির ১২০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। নির্বাচনে মোট ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।
Leave a Reply