1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন

প্রয়োজন ছাড়াই যন্ত্রপাতি পাঠায় সিএমএসডি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০

প্রয়োজন ছাড়াই শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে একটি চক্র হাতিয়ে নেয় সরকারি অর্থ। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) এমন অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অডিট অধিদপ্তরের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অডিটে। এ ছাড়া আরও নানা অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিষ্ঠানটির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। করোনা মহামারীর শুরুর দিকে নকল মাস্ক সরবরাহের মতো ঘটনাও ঘটেছে সিএমএসডিতে। আজকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সিএমএসডি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। সিএমএসডি : ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিএমএসডি, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ৭৬৮ কোটি ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এর মধ্যে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি হয় সিএমএসডিতে। প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজন ছাড়াই শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা পর্যায়ের জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা কমপ্লেক্সে সরবরাহ করেছে। এতে একদিকে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে জনগণও কোনো সুফল পায়নি।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের চাহিদার অতিরিক্ত ১৬টি ভেন্টিলেটর, আইসিইউ (এডাল্ট) কেনায় ২ কোটি ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯২ টাকার অপচয় হয়। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে ৪র্থ উচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দিয়ে ১ কোটি ৯১ লাখ ৩১ হাজার ৪৭৬ টাকার অনিয়ম করা হয়েছে। ৪টি এমআরআই মেশিন ক্রয়ে নিম্নদরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে তৃতীয় উচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ায় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৭০০ টাকার আর্থিক জালিয়াতি হয়। ক্রয় প্রক্রিয়ায় কার্যকর প্রতিযোগিতা না থাকা সত্ত্বেও ১টি মাত্র দরপত্র জমার ওপর অনিয়মিতভাবে একটি অর্থোস্কোপ মেশিন ক্রয় বাবদ ৮৭ লাখ ১০ হাজার ৭৭১ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় মঞ্জুরি ছাড়াই অনিয়মিতভাবে ৮টি সিটি সিমুলেটর ক্রয় বাবদ ৫০ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কোবাল্ট-৬০ মেশিন ক্রয় এবং বাঙ্কার তৈরি কাজের ওপর পারফরমেন্স সিকিউরিটি বাবদ ১৭ লাখ ৪২ ৬ হাজার ৯০৯ টাকা কম আদায় করে জালিয়াতি করা হয়েছে। মজুদ হিসেবে অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য রাখার মাধ্যমে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন বাবদ ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। সিএমএসডির প্রদর্শিত ব্যয় ও আইবাস প্লাস প্লাসে এ প্রদর্শিত ব্যয়ের মধ্যে ২৩১ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার টাকার পার্থক্য খুঁজে পেয়েছে অডিট দল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন করায় সরকারি অর্থের অপচয় করেছে কর্তৃপক্ষ। ব্যবহারকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কোনো চাহিদাপত্র ছাড়াই ৩০১ কোটি ৪৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুলেন্স কিনে অর্থের অপচয় ও আর্থিক জালিয়াতি করেছেন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় বাবদ ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করা হয়। অ্যাম্বুলেন্স কেনায় দুর্নীতি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ : সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দেওয়া, সরাসরি নগদ ক্রয়ে সীমাতিরিক্ত ব্যয়, মিটিংয়ে উপস্থিতির স্বাক্ষর সংবলিত তালিকা ও বিলের সঙ্গে সাব-ভাউচার ব্যতীত আপ্যায়ন খাতে অনিয়মিত ব্যয়সহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা অব্যয়িত অর্থ সময়মতো অর্থবিভাগকে ফেরত না দেওয়ার কারণে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮৬ কোটি ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬৬ টাকার গুরুতর অনিয়ম হয়।

বিশেষ বিশেষ কোডে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বছর শেষে ছাড় করা হয়নি। ১২৭০১ সচিবালয় পরিচালন কোডের নিরীক্ষা চাহিদাপত্র ও পুনরায় তাগিদপত্র জারি সত্ত্বেও নিরীক্ষাযোগ্য রেকর্ডপত্র সরবরাহ না করায় নিরীক্ষা যাচাই করতে পারেনি অডিট দল। এই কাজে বিধি ও পদ্ধতিগত অনিয়ম ধরা পড়েছে ৭০৩ কোটি ৬৯ লাখ ৩৩ হাজার ১০০ টাকার। বাজারদরের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে কম্পিউটার সামগ্রী সরবরাহ নেওয়ায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৮ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মিটিংয়ে উপস্থিতির স্বাক্ষর সংবলিত তালিকা ও বিলের সঙ্গে সাব ভাউচার ছাড়া আপ্যায়ন খাতে অনিয়মিত ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ ৩০ হাজার ৭৫ টাকা; যা বিধি ও পদ্ধতিগত অনিয়ম উল্লেখ করেছে অডিট দল। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আরও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যউপাত্ত তুলে এনেছেন কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর : অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ৩০ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরকারি গাড়িতে যাতায়াতকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আদায় করা ভাড়া সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া, অনিয়মিতভাবে আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ১ কোটি ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকা পরিশোধ, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের বিল বাবদ ১ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার টাকার সমন্বয়হীনতাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতে ডুবেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওএসডির তালিকায় নাম থাকা কয়েক হাজার চিকিৎসকের কোনো হিসাব বা তথ্য দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর : ওষুধ প্রশাসনে ৬১ কোটি ৮৮ লাখ ৬৫ হাজার ৮১০ টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে ২৪ কোটি ৯৬ লাখ ২৫ হাজার ১২৫ টাকার। ৩৬ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার ৬৮৫ টাকার বিধি ও পদ্ধতিগত অনিয়ম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, আউট সোর্সিংয়ের বিলের ওপর আয়কর কম কর্তন, লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষা ননট্যাক্স রেভিনিউ খাতে ৯ কোটি ৬৭ লাখ সাড়ে ৪৬ হাজার কম আদায়, ভ্যাটের ১ কোটি ৫০ লাখ সাড়ে ২৫ হাজার টাকা কম জমা দেওয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি কোষাগারে ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৮২ লাখ সাড়ে ৪৩ হাজার টাকা জমার বিষয়ে অডিট দলকে রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

অডিট আপত্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com