তিনি ‘বিগ বি’, বলিউডের ‘শাহেনশাহ’। সত্তরের দশকের ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’। বয়স তার কাছে একটি সংখ্যা মাত্র। তাই বয়সকে ফুঁ দিয়ে তিনি আজ পা দিলেন ৭৮ বছর বয়সে? শুভ জন্মদিন। তার ভরাট কণ্ঠ এবং অভিনয়-জাদুতে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব। তিনি অমিতাভ বচ্চন। ভারতীয় সিনেমায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে পদ্মবিভূষণ সম্মানও প্রদান করা হয়। শুধু তা-ই নয়, ফ্রান্সের তরফ থেকে ২০০৭ সালে ‘নাইট অব দ্য লন্ডন’ সম্মানও দেওয়া হয়?
৭৮ বছর বয়সেও বলিউডের এ প্রজন্মের হিরোদের সঙ্গে বক্স অফিসে টক্কর দেন অমিতাভ। প্রথম দিকে টানা ২০ বছর একের পর এক হিট ছবি দিয়েছেন। প্রযোজকরা লাভ কুড়িয়েছেন। কিন্তু এখন আর এসব টাকার অঙ্ক নিয়ে মাথা ঘামান না অমিতাভ বচ্চন। ছবি কত টাকা রোজগার করল, তা নিয়েও নয়। কারণটা বললেন নিজেই। অমিতাভ বলেন, ‘আমার ছবি ১০০ কোটির ক্লাবে ঠাঁই পাবে না। এটুকু বাস্তবজ্ঞান আমার আছে। ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে এসে এসব ভাবাও উচিত নয়। যখন ছবির হিরো হতাম, তখন এসব নিয়ে ভাবতাম। কারণ তখন আমার কাঁধে অনেক বেশি দায়িত্ব ছিল।’
এখন শুধু ছবির চিত্রনাট্য, গল্প, ছবিতে তার চরিত্র নিয়ে ভাবেন বিগ বি। তবে এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তার। তিনি বললেন, ‘৭৪ বছর বয়সেও এত পরিচালক আমার সঙ্গে কাজ করতে চান। রোজ ঘুম থেকে উঠে কাজে যাই। এর চেয়ে বেশি আর কী পেতে পারি! এ জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।’
বিগ বির জন্মদিন বলে কথা। শুভেচ্ছাবার্তায় ভরে উঠেছে অভিনেতার টুইটার প্রোফাইল। ইতোমধ্যেই টুইটারে তার ভক্তদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন মিস্টার বচ্চন। কিন্তু এ বছর জন্মদিন সেলিব্রেটই করতে চাইছেন না তিনি। সংবাদমাধ্যমকে বিগ বি বলেছিলেন, ‘জন্মদিন নিয়ে বোকার মতো হইচই করার কোনো মানে হয় না। আমার কাছে এ দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতোই সাধারণ।’
বাবা-মা-স্ত্রী-সংসার
বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন আর মা তেজি বচ্চনের খুব কাছের ছিলেন কনিষ্ঠ পুত্র অমিতাভ। হরিবংশ রাই বচ্চন ছেলের নাম রাখতে চেয়েছিলেন ইনকিলাব। কিন্তু তেজি বচ্চনের আপত্তির কারণে তার নাম রাখতে হয় অমিতাভ।
স্ত্রী জয়ার সঙ্গে পুনে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটেই প্রথম দেখা হয় অমিতাভের। পরে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ ছবিটির সেটে জয়ার সঙ্গে আবার দেখা হয় অমিতাভের।
হাজার কাজ থাকুক। তবু পরিবারের জন্য আলাদা করে সময় বার করবেনই বিগ বি। তা সে শুরুর দিনগুলোর কথাই হোকবা আজ। জনপ্রিয়তার এতটা শিখরে ওঠার পরও আজ তিনি প্রকৃত অর্থেই ফ্যামিলি ম্যান।
অমিতাভ কেন রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন?
রাজীব গান্ধী চেয়েছিলেন বলে ’৮৪-র লোকসভা ভোটে ইলাহাবাদে কংগ্রেসের টিকিট পেলেন অমিতাভ। জিতলেন। সাংসদ হলেন। তার পর ’৮৫ থেকে ’৮৭, এই দুবছরের মধ্যে অমিতাভের ওপর ‘বিরক্ত’ হয়ে পড়েছিলেন রাজীব, এমনটাই দাবি ফোতেদারের, তিন বছর আগে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীতে।
ফোতেদারের কথায়, ‘আমার কাছে রিপোর্ট আসছিল, এমপি হওয়ার পর থেকেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাজে বড় বেশি নাক গলাচ্ছিলেন অমিতাভ। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আমলারা কে কোথায় বদলি হবেন, কোন আমলার চাকরি বা প্রমোশন হবে আর কার হবে না, সেই সব ব্যাপারে অমিতাভ ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন।’ ফোতেদার জানিয়েছেন, এখানেই শেষ নয়। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রের মতো অন্য রাজ্যে দলের কোনো শাখা সংগঠনে কে কোথায় বসবেন, সে ব্যাপারেও নির্দেশ দিতে শুরু করেছিলেন অমিতাভ। রাজীবের রাজনৈতিক সচিবের কথায়, ‘ওই সময় রাজস্থানে তার পছন্দের এক জনকে দলের মহিলা শাখার চেয়ারপারসন করার জন্য চিঠি লিখে নির্দেশ দিয়েছিলেন অমিতাভ। সেই চিঠি আমি পড়েছিলাম। কিছুই বলিনি রাজীবজিকে। শুধু বলেছিলাম রাজস্থানের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিদেব জোশীকে। উনি রাজি হলেন না। বললেন, কাকে ওই পদে বসাবেন, তা ওর ঠিক করা আছে।’ যে দিন রাজীব-অমিতাভের সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করল, সেই দিনটারও সাক্ষী ছিলেন ফোতেদারই।
ফোতেদার জানিয়েছেন, এক দিন অমিতাভ দেখা করতে এলেন প্রধানমন্ত্রীর (রাজীব) সঙ্গে। ওদের মধ্যে কথা হলো বেশ কিছু ক্ষণ। বেলা তখন পৌনে তিনটে। ফোতেদার মধ্যাহ্নভোজে যাবেন বলে ভাবছেন। এমন সময় রাজীবজি ডাকলেন তাকে। ফোতেদার গিয়ে দেখলেন, সাত নম্বর রেসকোর্স রোডে (প্রধানমন্ত্রী বাসভবন) তখন অমিতাভকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছেন রাজীব। ফোতেদার পৌঁছতেই তাকে আর অমিতাভকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন রাজীব। রাজীবের এক পাশে বসলেন অমিতাভ। অন্য পাশে ফোতেদার। ফোতেদারের কথায়, ‘আসল চমকটা অপেক্ষা করছিল ওখানেই। অমিতাভকে হঠাৎ রাজীবজি বললেন, ফোতেদার চাইছেন, তুমি পদত্যাগ কর। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। রাজীবজি যে এমন কথা বলবেন অমিতাভকে, আমি তার বিন্দুবিসর্গও জানতাম না। আগে আমার সঙ্গে কিছু আলোচনাও করেননি রাজীবজি। তা শুনে অমিতাভ বলেন, যদি ফোতেদার চান আমি ইস্তফা দিই, তা হলে দিয়ে দিচ্ছি। দাও কাগজপত্র দাও। কোথায় কী লিখে দিতে হবে বল।’
ফোতোদার জানিয়েছেন, এর পরেই তিনি ডাকেন রাজীবের ব্যক্তিগত সচিব ভিনসেন্ট জর্জকে। তাকে একটা রাইটিং প্যাড আর সাংসদ অমিতাভের লেটারহেড প্যাড আনতে বলেন। ফোতেদার বলেছেন, ‘আমি অমিতাভকে বললাম, নিজের হাতে লিখুন লোকসভার স্পিকারকে। আপনি ইস্তফা দিতে চান। অমিতাভ জানতে চাইলেন, এইটুকু লিখে দিলেই হবে? তার পর সেই চিঠি পাঠানো হলো স্পিকারকে। আর তা গ্রহণও হয়ে গেল।’
অমিতাভের যত গাড়ি
অমিতাভ-জয়ার কত সম্পদ রয়েছে
বচ্চন দম্পতির সম্পত্তি প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি। ২০১২ সালে বচ্চন দম্পতির সম্পত্তির মোট হিসাব পাওয়া গিয়েছিল ৪৯৩ কোটি টাকা। বর্তমানে বচ্চন দম্পতির স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৪৬০ কোটিরও বেশি। একই সঙ্গে তাদের অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে প্রায় ৫৪০ কোটি টাকার। ২০১২-তে যা ছিল ৩৪৩ কোটির কাছাকাছি। সম্পত্তির খতিয়ানে দেখা গিয়েছে, বচ্চন দম্পতির কাছে সোনাসহ গয়না রয়েছে ৬২ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে শুধু অমিতাভেরই রয়েছে ৩৬ কোটি টাকারও বেশি গয়না।
বচ্চন দম্পতির গ্যারাজে রয়েছে ১২টি বিলাসবহুল গাড়ি, যার মোট দাম ১৩ কোটি টাকারও বেশি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি রোলস রয়েস, তিনটি মার্সিডিজ, একটি পোরশা এবং একটি রেঞ্জ রোভার। অমিতাভের একটি ন্যানো ও ট্র্যাক্টরও রয়েছে। অমিতাভ ও জয়ার দুটি ঘড়ি রয়েছে যার একটির দাম ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অপরটি ৫১ লাখ টাকার। অমিতাভের একটি পেন রয়েছে যার দাম ৯ লাখ টাকারও বেশি। ফ্রান্সে জমি ও বাড়ি মিলিয়ে বচ্চন দম্পতির ৩ হাজার ১৭৫ বর্গমিটারের সম্পত্তি রয়েছে। একই সঙ্গে নয়ডা, ভোপাল, পুনে, আহমেদাবাদ এবং গান্ধীনগরেও সম্পত্তি রয়েছে।
Leave a Reply