অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক প্রবণতা হিসেবে বাজেটের আকারও বাড়ে। ১৯৭১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৮টি বাজেটে প্রতিবছরই বাড়ছে আকার। আগামী অর্থবছরেও বাড়বে বাজেটের আকার। ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৫ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। ১৯৭২ সালে প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নিজ নিজ বাজেট কাঠামো তৈরির নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রূপকল্প-২১-এর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন এবং মুজিববর্ষ উদযাপনে এবারের বাজেট ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নে থাকছে বিশেষ নজর। সূত্র জানায়, নতুন বাজেটের আগে ঋণের বিপরীতে সিঙ্গল ডিজিট সুদহার কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া রেমিট্যান্সের টাকা বিনিয়োগে নিয়ে আসতে আগামী বাজেটে ‘বিশেষ নীতি’ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে থাকছে বিশেষ নজর।
আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে চলতি বাজেটে একশ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এ বরাদ্দ শিক্ষা, প্রযুক্তি, কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণে ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চলতি বাজেটে ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার পর রেমিট্যান্স আহরণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স আহরণ ৫ বিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।
গত ডিসেম্বরের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রণয়নসংক্রান্ত বৈঠক করে। বৈঠকে আগামী বাজেটের আকার কী রকম হবে, কোন কোন খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে, মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেট কাঠামো কত দিনের মধ্যে পাঠাতে হবে, বিশেষ কোনো পলিসি গ্রহণ করা হবে কিনাÑ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় বাজেটেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিবছর বাড়ছে বাজেটের আকার।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ জন্য বৈষম্য কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রামের মানুষকে জীবনের তাগিদে যাতে শহরে ছুটতে না হয়, সে জন্য চলতি বাজেটে গ্রামবান্ধব কর্মসূচিতে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার। আগামী বাজেটেও ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচি প্রাধান্য পাচ্ছে।
এ ছাড়া চরম দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগে। এ লক্ষ্যে ভ্যাট ও কর না বাড়িয়ে গ্রোথ সেন্টার বাড়িয়ে ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে বাড়ানো হবে সরকারি বিনিয়োগ।
এদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা ঘোষিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বেসরকারি খাতে।
Leave a Reply