বিশ্বের প্রভাবশালী এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে ৩রা নভেম্বর। স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বের মানুষ তাকিয়ে রয়েছেন এ নির্বাচনের ফলাফল থেকে শুরু করে খুটিনাটি প্রায় সব বিষয়ের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার মাত্র ১.১ শতাংশ মুসলিম হলেও ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে তাদের অবস্থান। নির্বাচিত হলে মুসলিম দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণে দলটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন কি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা নিয়ে তুমুল আগ্রহ সারা বিশ্বের মুসলিমদের। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর তার বাস্তবায়ন সবসময় এক বিষয় না হলেও এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই কারো।
বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং অঞ্চলের বিভিন্ন ইস্যুতে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে যে যে নীতি অনুসরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন (জো বাইডেন এবং তার রানিং মেট কমালা হ্যারিসের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন থেকে সংগ্রহ করা):
সৌদি আরবঃ
বাইডেন সৌদি সরকারের সাথে মার্কিন সম্পর্ক পর্যালোচনা করবেন এবং ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বন্ধ করবেন।
ভারত এবং কাশ্মীরঃ
বাইডেন মনে করেন, ভারত সরকারের উচিত কাশ্মীরের সব মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া- ভিন্নমতের উপর নিষেধাজ্ঞাগুলো যেমন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ রোধ করা বা ইন্টারনেট বন্ধ করা/গতি কমিয়ে দেওয়া যেসব জিনিস গণতন্ত্রকে দুর্বল করে।
আসামে জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন কার্যকর এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাস করে এবং এরপরে ভারত যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে হতাশ বাইডেন। এই পদক্ষেপগুলো দেশটির দীর্ঘ ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্যের সাথে এবং বহু-জাতিগত এবং বহু-ধর্মীয় গণতন্ত্র বজায় রাখার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
রোহিঙ্গাঃ
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম জনসংখ্যার দেশগুলোতে যা ঘটছে তাতে মুসলিম-আমেরিকানরা যে ব্যথা অনুভব করছেন তা জো বুঝতে পেরেছেন বলে মন্তব্য করেন তার মতে, চীনের পশ্চিমাঞ্চলে দশ লক্ষেরও বেশি উইঘুর মুসলমানকে জোর করে আটকে রাখা অযৌক্তিক। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি জিনজিয়াংয়ের বন্দী শিবিরের বিরোধিতা করবেন এবং নেপথ্যের ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোকে এই ভয়াবহ নিপীড়নের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন। তাছাড়া তার মতে, বার্মার রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য এবং নৃশংসতা ঘৃণ্য কাজ যা শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।
মধ্যপ্রাচ্যঃ
কর্তৃত্ববাদী নেতাদের নেতৃত্বে থাকা মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে বাইডেন প্রশাসনের সম্পর্ক, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক নীতি বিবেচনা করা হবে।
তার মতে, এটি বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থানকে ক্ষুন্ন করে এবং অসন্তুষ্টির ঝুঁকিতে ফেলে- যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি নির্যাতনকে ক্ষমা করে দেন, স্বৈরাচারী নেতাদের সাথে তামাশা করেন কিংবা মিশরের প্রেসিডেন্টকে যখন বলেন “আমার প্রিয় একনায়ক।”
ফিলস্তিনঃ
জো বাইডেন প্রত্যেক ফিলিস্তিনি এবং প্রত্যেক ইসরাইলির জীবনের মূল্যে বিশ্বাসী। ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিরা যাতে সমান স্বাধীনতা, সুরক্ষা, সমৃদ্ধি এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভোগ করতে পারে সে লক্ষ্যে তিনি কাজ করবেন। তার নীতিগুলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে ইসরাইল এবং ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র শান্তি, নিরাপত্তা এবং পারস্পরিক স্বীকৃতিতে একসাথে বাস করবে।
বাইডেন দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ দুর্বল করে এমন যে কোন পক্ষের একতরফা পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। তিনি বসতি সম্প্রসারণের বিরোধিতা করেন এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবেও সেই বিরোধিতা অব্যাহত রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাইডেন ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা পুনরুদ্ধারে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, মার্কিন আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শরণার্থীদের সহায়তা প্রদান সহ গাজায় চলমান মানবিক সঙ্কট মোকাবেলায় এবং পূর্ব জেরুজালেমে মার্কিন কনস্যুলেট পুনরায় চালু করবেন এবং ওয়াশিংটনে পিএলও মিশনটি আবার চালু করতে কাজ করবেন।
লেবাননঃ
দুর্নীতিমুক্ত, এবং সকল স্টেকহোল্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের বিকাশ ও বাস্তবায়নের জন্য লেবাননের নাগরিক সমাজ এবং নাগরিকদের সহায়তা করার জন্য বাইডেন তার প্রশাসনকে নির্দেশ দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্র লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীকে পুরো দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় স্তম্ভ হিসেবে সমর্থন অব্যাহত রাখবে, পাশাপাশি গ্রীষ্মে বৈরুত বন্দরে ঘটা বিস্ফোরণ থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য এবং বিপুল সংখ্যক শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের জন্য সহায়তা ও সমাধান দেবে। বাইডেন প্রশাসন লেবাননের নাগরিক সমাজকে দেশটিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
ইয়েমেনঃ
ডনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব সরকারকে ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ, জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড এবং দেশে ভিন্নমতের উপর ক্র্যাকডাউন চালানো, নারী মানবাধিকারকর্মীদের লক্ষবস্তুতে পরিণত করার এক ভয়াবহ নীতি অনুসরণ করতে একটি ব্ল্যাংক চেক দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন বাইডেন।
সিরিয়াঃ
সিরিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত নীতি বারবার হতাশ করছে। বাইডেন নাগরিক সমাজ এবং গণতন্ত্রপন্থীদের সাথে মাঠে দাঁড়াতে পুনরায় অংগীকার করবেন। তিনি নিশ্চিত করবেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইএসআইএসকে পরাজিত করতে বৈশ্বিক জোটকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং আরও বেশি সিরিয়ার নাগরিকদের সক্রিয় করতে একটি রাজনৈতিক মীমাংসায় রূপ দিতে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কি লাভ রয়েছে তা স্পষ্ট করবেন।
রাজনৈতিক সমাধান অর্জনে, নিপীড়িত সিরিয়ানদের রক্ষায়, এনজিওদের কাজ সহজ করতে এবং সিরিয়ার পুনর্গঠনে অন্যান্য দেশের সমর্থন আদায়ে বাইডেন ক্রিয়াশীল সব পক্ষকে চাপ দেবেন। তিনি মানবিক ইস্যুতে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অংগীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন।
Leave a Reply