মহামারী রূপ নেওয়া কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ধীরগতিতে চলছে সরকারের রাজস্ব আদায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই ঘাটতি ১২ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অর্থবছর শেষেও রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি থাকবে। কেননা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি দপ্তরগুলোর সব ধরনের গাড়ি কেনা বন্ধ, বিলাসী ব্যয় কর্তন, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ ও ভ্রমণ স্থগিত করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর খরচ কমানোর এক নতুন নির্দেশনা জারি করে সরকার। সেখানে উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চলতি অর্থবছরের বাজেটের থোক বরাদ্দের অর্থ দিয়ে পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। ইতিমধ্যে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। অথচ রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ঘাটতি। এর কারণেই ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার। অতিগুরুত্বপূর্ণের বাইরে খরচ করতে চাচ্ছে না। এ জন্য উন্নয়ন ও পরিচালন- উভয় ধরনের ব্যয় সংকোচন নীতি বেছে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিলাসী ব্যয় ও বিদেশ ভ্রমণ এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও যাতায়াত খরচ কমানোর কৌশল নিয়েছে সরকার। এ জন্য বেশিরভাগ সভা করা হচ্ছে অনলাইনে। এতে করোনার সংক্রমণ ঝুঁকিও কমানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘স্পষ্টই বোঝা
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে বছরের শুরুতেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যদিও মে মাসের পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। গত অর্থবছরের ঘাটতিই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ বাড়াতে হচ্ছে সরকারকে। চাপ পড়ছে ব্যাংকগুলোর ওপর।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, মহামারীকালে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। অথচ গত অর্থবছরের এ সময়ে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছিল। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট থেকে ১৫ হাজার ৪৬৪ কোটি, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১০ হাজার ২০ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ১৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা আদায়ের টার্গেট ছিল। কিন্তু এই দুই মাসে ভ্যাট থেকে ৯ হাজার ৮৮৭ কোটি, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৮ হাজার ৮০৩ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ঘাটতি ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এ দিকে রাজস্ব ঘাটতির কারণে সমাপ্ত এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে থোক বরাদ্দের অর্থ দিয়ে। যদিও বাজেটের এ বরাদ্দ মূলত বিশেষ প্রয়োজন কিংবা আপতকালীন ব্যবহারের জন্য রাখা হয়। আর প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় একটি নিয়মিত ব্যয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থোক বরাদ্দের অর্থ বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় করলে অন্য খাত বঞ্চিত হতে পারে।
অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ও শেষ কিংবা বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলোর কর্মচারীদের চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের বেতন-ভাতা বাজেটের থোক বরাদ্দ থেকে পরিশোধ করা যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়। তবে স্থায়ী কমিটি যেসব পদের জন্য সুপারিশ করেছে শুধু তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধে এ অর্থ ছাড় করতে বলা হয়। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সাংসদদের জন্য ৫ কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ রয়েছে। এ অর্থ মূলত এমপিরা নিজ নিজ এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য ব্যবহার করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে সংসদ সদস্যদের টাকা দেওয়া খুব কঠিন হবে। যদিও তাদের ওপর অনেক চাপ রয়েছে নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন রকম অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সব মিলিয়ে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাখা আছে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায়। এ খাতে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রেখেছে। এর মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে করোনার ভ্যাকসিন কেনা বাবদ খরচ হবে আট হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই হাজার কোটি টাকার মধ্যে এক হাজার কোটি খরচ করা হয়েছে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরসহ করোনার সামগ্রী ক্রয় বাবদ।
Leave a Reply