আবুধাবি বিমানবন্দর থেকে ১১২ প্রবাসী বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে দুষছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে আবুধাবি ইমিগ্রেশন বিভাগের পলিসির হঠাৎ পরিবর্তন ও কিছু বিষয়ে অস্বচ্ছতাকে দায়ী করেছে বেবিচকের গঠিত তদন্ত কমিটি। গতকাল বুধবার বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান এই কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্যসহ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, গত ১০ আগস্ট আবুধাবির ইমিগ্রেশন বিভাগ তাদের পলিসি পরিবর্তন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, যাদের ভিসার মেয়াদ আছে বা নেই, তারা আবুধাবি ঢুকতে পারবেন। তবে ১৩ আগস্ট তারা তাদের সেই পলিসিতে পরিবর্তন আনেন। সংশোধিত পলিসিতে তারা বলেনÑ আবুধাবিতে প্রবেশের জন্য প্রবাসীদের দ্য ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি অ্যান্ড সিটিজেনশিপের (আইসিএ) অনুমোদন লাগবে। আর যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের সে দেশে প্রবেশের অনুমোদন আছে কিনা সেটি যাচাইয়ের জন্য একটি ওয়েব পোর্টালের ঠিকানা দিয়েছে। তবে এই নির্দেশনাটি প্রবাসী যাত্রী ও বিমান সংস্থা এড়িয়ে গেছে। তাই তারা দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের ফেরত পাঠানো বা কী করলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সে দেশে ঢুকতে পারবেন, সে বিষয়ে আবুধাবি ইমিগ্রেশন বিভাগের পক্ষ থেকে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায়নি। এ ছাড়া এয়ার এরাবিয়া এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের কাছে সমাধান জানতে চাইলেও আবুধাবি ইমিগ্রেশন তাদের কোনো সদুত্তর দেয়নি।
গত ১৪ ও ১৬ আগস্ট বাংলাদেশি যাত্রীদের দেশে ফেরত পাঠায় আবুধাবি। এ ঘটনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী যাত্রী ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এয়ারলাইন্সেরও ছোট ভুল ছিল। বোর্ডিং পাস দেওয়ার জন্য এয়ারলাইন্সকে ৪টি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেÑ বোর্ডিং পাস দেওয়া। আবুধাবি থেকে বোর্ডিং পাসের ক্লিয়ারেন্সের জন্য বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সের চেক-ইন কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তাদের ‘বিজিডি’ কোড এন্ট্রি দিতে হয়। তবে পলিসি পরিবর্তনের কারণে ‘বিজিডি’ কোড দেওয়ার পরও বোর্ডিং পাস আসেনি। তখন বিমান প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ‘বিজি’ কোড টাইপ করেন। সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডিং পাস চলে আসে। তবে বিজি কোডটি ছিল বুলগেরিয়ার জন্য। তাই বুলগেরিয়ার নাগরিক ভেবে সিস্টেম থেকে পাস ইস্যু হয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আবুধাবির হঠাৎ পলিসি পরিবর্তন ও পরিবর্তিত পলিসিতে কিছু অস্পষ্টতা থাকার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও এয়ার এরাবিয়া আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তানের যাত্রীদেরও একইভাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
কমিটি এই ঘটনা নিয়ে কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সেগুলো হলোÑ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্ব স্ব দেশের দূতাবাসগুলোতে সে দেশের সর্বশেষ পলিসিগুলো থাকা, প্রবাসীদের জন্য হালনাগাদ তথ্য ও তাদের যাত্রা নির্বিঘœ করতে একটি অনলাইন পোর্টাল খুলে সেখান থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেওয়া, ত্রুটির বিষয়ে আবুধাবির দূতাবাস কর্তৃক অধিকতর তদন্ত করা। কারণ বর্তমান তদন্ত কমিটি আবুধাবি ইমিগ্রেশন থেকে তথ্য চাইলেও তারা তদন্ত কমিটিকে কোনো তথ্য দেয়নি।
সুপারিশে আরও উল্লেখ করা হয়Ñ ফেরত ১১২ জনকে টিকিট, কোভিড-১৯ টেস্ট খরচসহ সরকারি ব্যবস্থাপনায় আবুধাবি পাঠানো, দেশে অবস্থানরত অন্যদের জরুরি ভিত্তিতে আবুধাবি প্রেরণে উদ্যোগ গ্রহণ, বিমান সংস্থা এবং কল্যাণ ডেস্কের মধ্যে তথ্যপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে।
Leave a Reply