পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে আবেদন করেন মো. আতিকুল ইসলাম। বিআরটিএ ডোপ টেস্ট (মাদক গ্রহণ করেন কিনা সেটা যাচাই) করাতে বলে। তিনি টেস্টের জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর তথা পঙ্গু হাসপাতাল) যান। কিন্তু সেখানে ল্যাবের সামনে নোটিশে দেখতে পান ‘কিট শেষ হওয়ায় ডোপ টেস্ট বন্ধ’। ল্যাব সংশ্লিষ্টরাও একই তথ্য দেন। এরপর আতিকুল বিআরটিএ’র ফর্মে উল্লেখিত আরেক প্রতিষ্ঠান আগারগাঁওয়ের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার’-এ যান। সেখান থেকে জানানো হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী যারা ঢাকা জেলার বাসিন্দা, কেবল তাদের ডোপ টেস্ট করা হয়।
নিরুপায় আতিকুল টেস্টের জন্য নির্ধারিত আরেক হাসপাতাল মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে গেলে জানানো হয়, কিট সংকটে দৈনিক ৫ থেকে ৭ জনের টেস্ট হয়। সিরিয়াল দিলে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের পর টেস্ট করাতে পারবেন। হাসপাতালটির ল্যাব টেকনোলজিস্টরা তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। সেখানে গেলে জানানো হয়, দৈনিক ৩০ জনের বেশি সিরিয়াল নেওয়া হয় না। দ্রুত টেস্ট করানোও সম্ভব নয়। সবশেষ তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় হাসপাতালে গিয়ে টেস্টের জন্য নমুনা দিতে সক্ষম হন তিনি।
ডোপ টেস্ট হয় এমন কয়েকটি হাসপাতালের ল্যাবে (পরীক্ষাগার) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু আতিকুলই নয়, তার মতো বহু লোক পরীক্ষাটি করাতে গিয়ে কিট সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও একই সংকট চলছে।
জানতে চাইলে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ (ল্যাব) মো. আ. রহমান দেওয়ান যুগান্তরকে বলেন, গত অর্থ বছরে যে রিএজেন্ট কেনা হয়েছে সেগুলো সর্বোচ্চ আর একমাস চলবে। নতুন দরপত্র না হওয়া পর্যন্ত সংকট কাটবে না।
নিটোরের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মাহমুদ বলেন, আগে দিনে ১৫০ থেকে ২০০ জনের টেস্ট হত। কিটের স্টক শেষ হওয়ায় টেস্ট বন্ধ আছে। হাসাপাতাল পরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র দিয়েছি। সরবরাহ পেলে পুনরায় চালু করা যাবে। এ বিষয়ে পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় বিস্তারিত ভালো বলতে পারবে।
নিটোরের পরিচালক ডা. আবুল কেনান বলেন, রিএজেন্ট সংকট ছিল, কেনা হচ্ছে। ডোপ টেস্টের কিটসহ অন্যান্য উপকরণ আসছে কিনা খোঁজ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত বলতে পারব।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম সাহাবুদ্দিন আহামদ বলেন, কোভিডের সময় চালু হওয়া ইআরপিপি প্রজেক্টের আওতায় বেশকিছু জনবল এখানে কাজ করত। তখন টেস্টও বেশি হতো। প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেছে। বর্তমান জনবল দিয়ে আগের মতো চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানোর পর যাদের ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ঢাকা জেলার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে তাদের টেস্টের নির্দেশনা দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু আহসান মো. মঈনুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, যেসব হাসপাতালে ডোপ টেস্টের নির্দেশনা আছে ওই হাসপাতালগুলোর এমএসআর বাজেট থেকে ডোপ টেস্টের কিট, রিএজেস্ট কেনার নিয়ম। সংকট হলে দায়ভার হাসপাতাল পরিচালকের। অধিদপ্তর থেকে কিট সরবরাহ করা হয় না। যেহেতু হাসপাতালগুলোতে অর্থ, জনবল, ল্যাব সবকিছু আছে। বন্ধের কারণ সম্পর্কে তারাই বলবে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, কোনো ব্যক্তি মাদকাসক্ত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় তাকেই ডোপ টেস্ট বলে। যারা নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের শরীরে ওই নেশাজাতীয় পদার্থের উপস্থিতি কিছুটা হলেও থেকে যায়। আর সেটিই ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে।
Leave a Reply