বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রথমবারের মতো নিলামে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিলামে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ডলার আজ সোমবার (১৩ জুলাই) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে যোগ হবে।
এর আগে বিভিন্ন সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নির্ধারিত দরে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এবারই প্রথম সেটা নিলামের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, “ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম কমেছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনার।
আরিফ হোসেন খান বলেন, “ডলারের দর কমলে প্রবাসী ও রপ্তানিকারকদের অসুবিধা হয়। তাদের যেন সমস্যা না হয়, সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৩ জুলাই ডলারের গড় দর ছিল ১২০ টাকা ৬০ পয়সা। আর ১০ জুলাই ছিল ১২১ টাকা ৮৫ পয়সা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অর্থ পেতে ১৪ মে ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এতে ডলারের দাম বাড়েনি।
আগের চেয়ে শর্ত শিথিল করার পর বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা কাটিয়ে প্রথমে কিছুদিন একই জায়গায় ঘুরপাক খাওয়ার পর গত দেড় সপ্তাহ থেকে তাতে কিছুটা নিম্নমুখী ভাব দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার কথা বলছেন ব্যাংকাররা। মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমায় সেভাবে ডলার খরচ হচ্ছে না বলেও তুলে ধরেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মাঝে কয়েক মাস রেমিটেন্সে উল্লম্ফনের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এর সঙ্গে জুনে আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে অর্থ ছাড় হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের ডলার আসে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, “ডলার কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর চাহিদার তুলনায় বেশি রেট অফার করা হয়েছে। নিলামে ডলার বিক্রি করার জন্য অধিকাংশ ব্যাংক ১২০ টাকার আশপাশে দর বেঁধে দেয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দর দিচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “ডলারের দাম যেভাবে কমছিল, তাতে বাজার প্যানিকড হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু আমাদের ডলারের প্রবাহ ভালো, সেহেতু এই দর আরও কমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
তিনি বলেন, “ডলারের দাম কমে গেলে আমদানিকারকরা উপকৃত হলেও রপ্তানিকারক ও রেমিটেন্স পাঠানো প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। সেক্ষেত্রে হুন্ডিতে চলে যাওয়ার হুমকিও তৈরি হত। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি দামে ডলার কিনে মার্কেটকে আপে যাওয়ার সিগন্যাল দিয়েছে।”
Leave a Reply